অর্থনীতিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর

অর্থনীতিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর: অর্থনীতিতে বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও ধারণা। বাজারকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আবর্তিত হয়। অর্থাৎ বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূলকেন্দ্র বিন্দু। অর্থনীতিতে প্রতিটি দ্রব্যসামগ্রী বা সেবার ক্রয়বিক্রয় নিয়ে এক একটি বাজার গঠিত হয়। এজন্য অর্থনীতিতে বিভিন্ন শ্রেণির বাজার লক্ষ করা যায়।

অর্থনীতিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর

ক. আয়তন বা পরিধির ভিত্তিতে বাজার: আয়তন বা পরিধির ভিত্তিতে বাজারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

১. স্থানীয় বাজার: দ্রব্য কেনাবেচার দরকষাকযি যদি দেশের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তাকে স্থানীয় বাজার বলে। যেমন- শাকসবজি ও মাছের বাজার।

২. আন্তর্জাতিক বাজার: যে দ্রব্যের বাজার দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তার লাভ করে তাকে আন্তর্জাতিক বাজার বলা হয়। যেমন- তৈরী পোশাক, সোনা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির বাজার।

৩. জাতীয় বাজার: যে সমস্ত দ্রব্যের বাজার সারাদেশ ব্যাপী ক্রয়-ব্রিক্রয় হয় অথচ রপ্তানি হয় না তাকে জাতীয় বাজার বলে। যেমন— দেশীয় প্রসাধনী, দেশীয় বস্তু ইত্যাদির বাজার জাতীয় বাজার নামে পরিচিত।

খ. সময়ের ভিত্তিতে বাজার: সময়ের ভিত্তিতে বাজারকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা-

১. অতি স্বল্পকালীন বাজার: যে দ্রব্যসামগ্রীর বাজার অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পাদিত হয়, তখন সে বাজারকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলে। এ প্রসঙ্গে মার্শাল বলেন, “যে বাজারের স্থিতিকাল কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন মাত্র সে বাজারকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলে। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদির বাজার।

২. স্বল্পকালীন বাজার: যে বাজারে দ্রব্যের চাহিদা অনুযায়ী যোগানের পরিমাণ সামান্য বাড়ানো বা কমানো যায় তাকে স্বল্পকালীন বাজার বলে। এ বাজারে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণে দ্রব্যের যোগানের চেয়ে চাহিদার ভূমিকা বেশি।

৩. দীর্ঘকালীন বাজার: যে বাজারে দ্রব্যের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে যোগানের পরিমাণ কম বেশি করা যায়, তাকে দীর্ঘকালীন বাজার বলে। এ প্রকার বাজার দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দীর্ঘকালীন দাম নির্ধারণ করা হয়।

৪. অতিদীর্ঘকালীন বাজার: অতিদীর্ঘকালীন বাজার বলতে সে সময়ের মেয়াদকে বোঝায়, যে সময়ে পুরনো প্রযুক্তির পরিবর্তে নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তন করা সম্ভব। এছাড়া অনেক সুদূর প্রসারী পরিবর্তন হয়ে থাকে, যেমন- জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রেতার রুচি, অভ্যাস, জ্ঞান প্রভৃতি দ্বারা অতিদীর্ঘকালীন বাজার নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়।

গ. প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজার; প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজার: যে বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকে যারা পূর্ণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় করে তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। এ প্রসঙ্গে মিসেস জোয়ান রবিনসন বলেন, “যে বাজারে প্রতিটি উৎপাদনকারী ফার্মের উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা পরিপূর্ণ স্থিতিস্থাপক, তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে।”

২. অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার: যে বাজারে কয়েকজন বিক্রেতা থাকে এবং ক্রেতা বিক্রেতা অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে দ্রব্য ক্রয়- বিক্রয় করে তাকে অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়।

২. (i) একচেটিয়া বাজার: যখন কোনো দ্রব্য একজন বিক্রেতা সরবরাহ করে তাকে একচেটিয়া বাজার বলে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক স্টিগলার বলেন, “একচেটিয়া কারবারি হচ্ছে এমন এক ধরনের দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যে দ্রব্যের কোনো ঘনিষ্ঠ পরিবর্তক নেই।”

(ii) ডুয়োপলি বাজার: যে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বহু কিন্তু বিক্রেতার সংখ্যা মাত্র দুইজন তাকে ডুয়োপলি বাজার বলে। এ প্রসঙ্গে হেন্ডারসন কুয়ান্ট বলেন, “একটি ডুয়োপলি শিল্পে দুজন বিক্রেতা থাকে।”

(iii) অলিগোপলি বাজার: যে বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা দুইজনের অধিক কিন্তু খুব বেশি নয়, এ ধরনের বাজারকে অলিগোপলি রাজার বলে। এক্ষেত্রে একজনের দাম ও উৎপাদন নীতি অন্যরা সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

(iv) একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার: একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলতে বোঝায়, যেখানে ছোট ছোট ফার্ম অবস্থান করে। তারা অদৃশ্য কিন্তু সামান্য বিভেদিকৃত দ্রব্য উৎপাদন করে। শিল্পে তাদের প্রবেশ ও প্রস্থানের অবাধ স্বাধীনতা থাকে এবং বাজার সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার জ্ঞান থাকে অসম্পূর্ণ।

(v) মনোপসনি বাজার: যে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা মাত্র একজন কিন্তু বিক্রেতা থাকে অসংখ্য পরিমাণে তাকে মনোপসনি বাজার বলে। অর্থাৎ যেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট উপাদান বা সম্পদের একক ক্রেতা থাকে।

(vi) ডুয়োপসনি বাজার: যে বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা অসংখ্য কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা মাত্র দুইজন তাকে ডুয়োপসনি বাজার বলে।

(vii) দ্বি-পাক্ষিক একচেটিয়া বাজার: যে বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা একজন করে থাকে অর্থাৎ ক্রেতা একজন বিক্রেতাও একজন তাকে দ্বি-পাক্ষিক একচেটিয়া বাজার বলে।

উপসংহার: কোনো একাধিক দ্রব্য বা সেরা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দরকষাকষির মাধ্যমে দাম নির্ধারিত হয় তাকে অর্থনীতিতে বাজার বলে। এ বাজারে উল্লিখিত শ্রেণিবিভাগ বিদ্যমান। প্রতিটি বাজারের ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। বাজারের এসব শ্রেণিবিভাগের মধ্যে বর্তমান একটি বাজার ব্যবস্থার ভূমিকাই সর্বাধিক।


আরও দেখুন: আয় বলতে কী বোঝায়? আয়ের প্রকারভেদ আলোচনা কর
আরও দেখুন: অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায় আলোচনা কর
আরও দেখুন: সম্পদ কী? সম্পদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
আরও দেখুন: সম্পদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
আরও দেখুন: উপযোগ কাকে বলে? ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধিটি ব্যাখ্যা কর
আরও দেখুন: উৎপাদন কাকে বলে? উৎপাদনের উপকরণসমূহ বর্ণনা কর
আরও দেখুন: রেখাচিত্রের সাহায্যে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধিটি ব্যতিক্রমসহ ব্যাখ্যা কর

আশাকরি “অর্থনীতিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।

Leave a Comment