অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়: মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক সমস্যার কোনো শেষ নেই। কারণ মানুষের অভাব অসীম। একটি অভাব পূরণ হলে আরেকটি অভাব এসে তার সামনে হাজির হয়। এ অসীম অভাব সীমিত সম্পদের দ্বারা পূরণের চেষ্টা করতে হয়। মানুষ এসব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে।
অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়
অফুরন্ত অভাবের তুলনায় সম্পদের স্বল্পতার কারণে মানবজীবনে অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ যে নানারকম কর্ম প্রচেষ্টা গ্রহণ করে তাকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। নিচে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন কর্মপর্যায়ের প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো-
১. উৎপাদন: মানুষের বিভিন্ন কর্মপর্যায়ের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য হলো উৎপাদন। কারণ উৎপাদন ছাড়া ভোগের কোনো প্রশ্ন ওঠে না। মানুষের অভাব অসীম। কিন্তু অভাব পূরণের উপকরণসমূহ অত্যন্ত সীমিত। কাজেই কোনো দ্রব্য কী পরিমাণে উৎপাদন করা হবে এবং কীভাবে উৎপাদন করা হবে সে সম্বন্ধে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। দেশের সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বাধিক উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালানো হয়। সমাজের মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে দ্রব্য উৎপাদনের ওপর। উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অভাব পূরণ করাই হলো মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার মূল লক্ষ।
২. বিনিময়: উৎপাদনের পরবর্তী পর্যায় হলো বিনিময়। প্রাচীন যুগে মানুষের অভাব ছিল সামান্য। প্রত্যেকে নিজ নিজ প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করে অভাব পূরণের চেষ্টা করত। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের প্রয়োজনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান যুগে কেউ তার প্রয়োজনীয় সবকিছুই উৎপাদন করতে পারে না।
প্রত্যেক ব্যক্তি তার দক্ষতা অনুযায়ী কিছু কিছু দ্রব্য উৎপাদন করে এবং তার বিনিময়ে অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করে। এভাবে সমাজে বিনিময়ের প্রয়োজন দেখা দেয়। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে দ্রব্যের ও সেবার আদান-প্রদান বা বিনিময় সংঘটিত হয়। বিনিময় প্রথার গোড়ার দিকে মানুষ এক পণ্যের সাথে অন্য পণ্যের বিনিময় করত। কিন্তু সমাজে মুদ্রার প্রচলন হওয়ার পর বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রা ব্যবহৃত হয়েছে। বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষ তাদের বিভিন্ন প্রকার অভাবের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে। এজন্যে মানুষের বিভিন্ন কর্মপর্যায়ের মধ্যে বিনিময়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
৩. বণ্টন: উৎপাদন ও বিনিময়ের পরবর্তী পর্যায় হলো বণ্টন। উৎপাদিত সম্পদ কে বা কারা ভোগ করবে এবং কাভাবে তা বণ্টন হবে তা স্থির করতে হয়। অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান কেবল দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে না বরং উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর বণ্টনের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে। ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত হয়।
কাজেই উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের উপকরণগুলোর মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে। জমির মালিক খাজনা, শ্রমিক মজুরি, মূলধনের মাসিক সুদ এবং সংগঠক মুনাফা পেয়ে থাকে। উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ভোগকারিগণের অভাব কতটা পূরণ করতে সক্ষম তা বহুলাংশে নির্ভর করে বণ্টন ব্যবস্থার ওপর। সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম বণ্টনের মাধ্যমেই অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহের সমাধান সম্ভব।
৪. ভোগ: অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়ের মধ্যে সর্বশেষ পর্যায় হলো ভোগ। মানুষের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যাবলির উদ্দেশ্য হলো অভাব পূরণ। একমাত্র ভোগের মাধ্যমেই মানুষ তার বিভিন্ন অভাব পূরণ করে। মানুষ চেষ্টা করে কীভাবে সীমাবদ্ধ সম্পদের সাহায্যে সীমাহীন অভাব মেটানো যায়। বস্তুত মানুষের সব কর্মপ্রচেষ্টা ভোগের নিমিত্তে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন উপকরণের সাহায্যে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ভোগের মাধ্যমে অভাব পূরণের চেষ্টা করা হয়।
উপসংহার: উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন এবং ভোগ এ চারটি পর্যায়ে কার্যক্রম সম্পন্ন হলেই অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান ঘটে। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক পর্যায়গুলো পরস্পর নির্ভরশীল এবং সম্পর্কযুক্ত। অধ্যাপক স্যামুয়েলসন মৌলিক তিনটি অর্থনৈতিক সমস্যার কথা বলেছেন, যা সমাধানের জন্য চারটি কর্মপর্যায় রয়েছে।
আরও দেখুন: অধ্যাপক এল. রবিন্স প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞাটির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আরও দেখুন: অধ্যাপক মার্শালের সংজ্ঞাটি বৈশিষ্ট্যসহ ব্যাখ্যা দাও
আরও দেখুন: অর্থনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
আরও দেখুন: মানুষ কীভাবে সীমিত সম্পদের সাহায্যে অসীম অভাব পূরণ করে তা আলোচনা কর
আরও দেখুন: অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ? ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
আরও দেখুন: বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
আশাকরি “অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।