ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সাধারণ শিক্ষা ব্যক্তির জ্ঞান-বুদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে। তাকে উন্নত ও সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করে। কেবল দুনিয়ামুখী শিক্ষা ব্যক্তির পার্থিব জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করলেও পরকালীন জীবন সম্পর্কে কোনো দিক নির্দেশনা দেয় না। ফলে ব্যক্তির আখিরাতে মুক্তির কোনো ব্যবস্থা থাকে না। কিন্তু ইসলামি শিক্ষা একই সাথে ব্যক্তির পার্থিব জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি পরকালীন মুক্তির ব্যবস্থা করে। ফলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনে ব্যক্তি সাফল্য লাভ করে।


ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ০১

মিজান সাহেব দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় তার একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করলে পরিবারের সদস্যরা সপ্তাহব্যাপী নাচ-গানের আয়োজন করে এবং তার একটি আধুনিক নাম রাখে। মিজান সাহেব দেশে এসে বিষয়টি অবগত হয়ে অত্যন্ত বিরক্ত হন এবং বলেন, তোমরা ইসলামি সংস্কৃতি বর্জন করেছ। মনে রেখ, মুসলিম সন্তানের জীবন শুরু করতে হয় ইসলামি সংস্কৃতিতেই। মাইলস্টোন কলেজ, ঢাকা।

ক. সংস্কৃতির আরবি প্রতিশব্দ কী?
খ. বয়স্ক শিক্ষায় মক্তব কী ভূমিকা পালন করতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
গ. ইসলামি সংস্কৃতি বর্জনের কথা বলে মিজান সাহেব কোন বিষয়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মিজান সাহেবের সর্বশেষ উত্তির আলোকে বিষয়টির আলোচনা কর। গুরুত্ব

০১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। সংস্কৃতির আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘সাকাফাহ’ বা ‘তাহজিব’।

খ। বয়স্ক শিক্ষায় মক্তব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মক্তব কেবল শিশুদের ক্ষেত্রেই নয় বরং নিরক্ষর বয়স্ক লোকদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এখানে ক্ষুদ্র অবকাঠামোর মধ্যেই বয়স্কদের সুবিধামতো সময়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা যায়। এখানে পড়াশোনা করে তারা নিরক্ষরতা থেকে অভিশাপমুক্ত হয়ে প্রকৃত মুসলিম হওয়ার সাধনায় লিপ্ত হতে পারে।

গ। ইসলামি সংস্কৃতি বর্জনের কথা বলে মিজান সাহেব সন্তান, জন্মের পর তার কানে আজান ও ইকামত না দেওয়া, আকিকা না করা এবং অনৈসলামিক নাম রাখার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

ইসলামি সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জন্মের পর শিশুর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া। শিশুর আকিকা করা ও সুন্দর ইসলামি নাম রাখাও ইসলামি সংস্কৃতির বিশেষ দিক। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স) বলেন- ‘যখন শিশুর জন্ম হয়, তার একটি সুন্দর নাম রাখো’ (বায়হাকি)।

তিনি আরও বলেন- সন্তানের জন্য আকিকা আবশ্যক। সুতরাং তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো এবং তার কষ্ট দূর করো’ (বুখারি)। সন্তান জন্মের ৭ম, ১৪তম বা ২১তম দিনে আকিকা দেওয়া সুন্নত। মিজান সাহেবের সন্তান জন্মগ্রহণের পর তার পরিবারের সদস্যরা ইসলামি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ এ কাজগুলো সম্পন্ন করেনি। তারা এর পরিবর্তে অনৈসলামিক কাজগুলো করেছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, মিজান সাহেবের পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করার পর তার পরিবারের সদস্যরা খুশি হয়ে ব্যাপক নাচ-গানের আয়োজন করে এবং তার অনৈসলামিক একটি নাম রাখে। তাদের এসব কাজ ইসলামি সংস্কৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তাই বলা যায়, ইসলামি সংস্কৃতি বর্জনের কথা বলে মিজান সাহেব উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

ঘ। মুসলিম সন্তানের জীবন শুরু করতে হয় ইসলামি সংস্কৃতির মাধ্যমে মিজান সাহেবের উক্তিটি যথার্থ। মুসলিম সন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি কাজই ইসলামের আদর্শ ও রীতি অনুযায়ী হতে হবে। ইসলামি সংস্কৃতির রীতি অনুযায়ী কোনো মুসলিম শিশু জন্মগ্রহণ করলে তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া, অর্থবহ সুন্দর নাম রাখা ও আকিকা করতে হয়, মিজান সাহেব এরই ইঙ্গিত করেছেন।

উদ্দীপকে দেখা যায়, মিজান সাহেবের সন্তানের জন্মের পর ইসলামি রীতিগুলো অনুসরণ করা হয়নি। নাচ-গানের আয়োজন, অনৈসলামিক নাম রাখা প্রভৃতির মাধ্যমে ইসলামি সংস্কৃতি বর্জন করা হয়েছে। অথচ মুসলিম সন্তানের জন্মের পর ইসলামি রীতিনীতি অনুযায়ী তাকে লালন-পালন করতে হয়। ইসলামের আদর্শ এবং রীতিনীতিকে ঘিরেই এ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। আর এ সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয় জীবনের প্রথম পর্যায় থেকেই এবং মুসলিমদের পুরো জীবনেই ইসলামি আদর্শ ও মূল্যবোধ অব্যাহত থাকে।

মুসলিমের জন্ম-মৃত্যু, লেনদেন, দেখা- সাক্ষাৎ, দৈনন্দিন জীবনের সবক্ষেত্রেই এ সংস্কৃতি বিরাজমান। এমনকি মৃত্যুর পর জানাজা করাও ইসলামি সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মুসলিম শিশুর জন্মের পর থেকেই ইসলামি সংস্কৃতির অনুসরণ করতে হয়। সন্তানের লালনপালন, বেড়ে ওঠা, চলাফেরা, শিক্ষালাড সবকিছুই ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধ অনুযায়ী করতে হয়। তাই মিজান সাহেবের উক্তিটিকে যথার্থ বলা যায়।


ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ০২

রাতুল ও মিতুল দু’তাই একাদশ শ্রেণির ছাত্র। রাতুল রসায়ন বিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী। একদিন মিতুল রাতুলের নিকট জাবির ইবনে হাইয়ান প্রসঙ্গে জানতে চাইল। রাতুল বলল, মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রসায়নবিদ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আজকের এ অভূতপূর্ব সাফল্যের গোড়ায় মুসলিমদের অবদানই শতভাগ।

ক. ইবনে সিনার চিকিৎসা বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কী?
খ. জাবির ইবনে হাইয়ানকে কেন আধুনিক রসায়নবিদদের জনক বলা হয়?
গ. জাবির ইবনে হাইয়ানের বিজ্ঞানচর্চা হতে বর্তমান মুসলিমগণকে অনুপ্রাণিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
ঘ. ‘জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাফল্যের গোড়ায় মুসলিমদের অবদান শতভাগ’- বক্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

০২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ইবনে সিনার চিকিৎসাবিষয়ক গ্রন্থের নাম ‘কানুন ফিক্সি’।

খ। জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়নশাস্ত্রের ওপর প্রায় পাঁচশত গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি রসায়ন বিজ্ঞানকে প্রণালিবন্ধ করে একে একটি গবেষণা পদ্ধতিতে পরিণত করেন। রাসায়নিক সূত্র ও পদ্ধতির ব্যবহারিক রূপ প্রদান করে তিনি রসায়নকে একটি আধুনিক কাঠামোতে দাঁড় করান। এ জন্য তাকে আধুনিক রসায়নবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

গ। জাবির ইবনে হাইয়ানের বিজ্ঞানচর্চা থেকে মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করতে তার রচনাসামগ্রী সম্পর্কে মুসলমানদের ব্যাপকভাবে জানাতে হবে।

জাবির ইবনে হাইয়ানকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়। তার বিজ্ঞানচর্চা থেকে মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করতে হলে তার সম্পর্কে মুসলমানদের জানাতে হবে। জানাতে হবে তিনি প্রাচীন রসায়নবিদদের তুলনায় অধিক মাত্রায় পরীক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করে রসায়নশাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য আলোচনা হিসেবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন।

তিনি প্রায় পাঁচশত গ্রন্থ রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- কিতাব আল রাহমাহ, কিতাব আল তাজমী, আল শারাকী ইত্যাদি। তিনি রসায়নশাস্ত্রের দুটি মূলসূত্র ভস্মীকরণ ও লঘুকরণকে বৈজ্ঞানিক নিয়মে আলোচনা করেছেন। তিনি বাষ্পীকরণ, ঊর্ধ্বপাতন, দ্রবীকরণ, স্ফটিকরণ প্রভৃতি পদ্ধতির উন্নতি সাধন করেছিলেন। তিনিই প্রথম যক্ষ্মা, এসিড, গন্ধক, দ্রাবক, জল দ্রাবক ও অন্যান্য যৌগিক সূত্র আবিষ্কার করেন। তিনি স্বর্ণ, রৌপ্য দ্রবীভূত করার উপযোগী উৎপাদন পদ্ধতি জানতেন। তার এ অবদানসমূহ মুসলমানদের বিজ্ঞানচর্চায় অনুপ্রেরণা দেবে।

ঘ। বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলিমদের অবদান অপরিসীম। মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতির যথাযথ উন্মেষ ও বিকাশে মুসলিম জাতির অবদান অবিস্মরণীয়। জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা গ্রহণকে ফরজ করে ইসলাম শিক্ষা ও জ্ঞাননির্ভর যে ধারার সূচনা করেছে তারই ধারাবাহিকতায় মুসলিম মনীষীগণ গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছেন।

তাদের অনুসন্ধিৎসা ও গবেষণা, জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিক্ষার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। যে জন্য আধুনিক বিজ্ঞান কেবল চমকপ্রদ আবিষ্কার ও কালোত্তীর্ণ তত্ত্বের জন্যই মুসলমানদের নিকট ঋণী নয়, বরং আধুনিক বিজ্ঞান তার অস্তিত্বের জন্যই তাদের কাছে চিরঋণী।

মুসলমানদের এ অবদান সম্পর্কে অধ্যাপক হিট্টি বলেছেন, অষ্টম শতকের মাঝামাঝি থেকে ত্রয়োদশ শতকের প্রারম্ভ পর্যন্ত আরবি ভাষাভাষী লোকেরা সমগ্র বিশ্বের সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিশারি ছিলেন। তাদের মাধ্যমে প্রাচীন বিজ্ঞান, দর্শন এমনিভাবে পুনর্জীবিত, সংযোজিত ও সম্প্রসারিত হয়েছিল। তাদের বৈজ্ঞানিক প্রতিভা আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেছিল।

খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে মুসলমানদের জ্ঞানসাধনা শুরু হলেও বিজ্ঞানচর্চা উমাইয়া যুগে শুরু হয়। আর এর বিস্তৃতি লাভ করে আব্বাসি যুগে। উমাইয়া যুগে আব্দুল মালিক, প্রথম ওয়ালিদ, উমর বিন আব্দুল আযিয প্রমুখ খলিফা জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ আরবিতে অনূদিত হয়েছিল। আব্বাসি যুগও জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনার এক স্বর্ণযুগ বলে ইসলামের ইতিহাসে পরিচিত। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে এ যুগের মনীষী ও পণ্ডিতদের সৃজনশীল অবদান আধুনিককালেও বিস্ময়কর বলে মনে হয়। এ যুগে চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত


ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ০৩

সোহেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিষয়ে এমএ শ্রেণির ছাত্র। সেখানে সে দ্রষ্টার পরিচয় জানার পাশাপাশি পৃথিবীতে মানুষের দায়িত্ব- কর্তব্য ইত্যাদি বিষয় শিখতে পেরেছে। এ বিষয়ে পড়াশুনার ফলে তার দুনিয়া ও পরকালের জীবন সুন্দর হবে বলে সে প্রত্যাশা করে। সোহেলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পিতা দশ বছর যাবত মসজিদে সকাল বেলা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কুরআন, হাদিস, পবিত্রতার পদ্ধতি বিষয়ের জ্ঞান শিক্ষা দেন। এর ফলে দেখা যায় এলাকার যে সকল ছেলেমেয়েরা মাদরাসা, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযোগ পায়নি, তারাও নামাজ-কালামসহ মৌলিক ইবাদতসমূহ ভালোভাবেই পালন করতে পারে।

ক. বীজগণিতের জনক কে?
খ. কানুন ফিত তিব্ব ইবনে সিনাকে অমরত্ব দান করেছে-ব্যাখ্যা করো।
গ. সোহেল কোন বিষয়ে পড়াশুনা করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সোহেলের পিতার কর্মকাণ্ড চিহ্নিতপূর্বক এর ধর্মীয় ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ করো। ৪

০৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। বীজগণিতের জনক হলেন মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারেজমি।

খ। চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল হিসেবে পরিচিত ‘আল-কানুন ফিততিব্ব’ গ্রন্থটির জন্য ইবনে সিনা চির অমর হয়ে আছেন।প্রখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা রচিত চিকিৎসা বিষয়ক একটি কালজয়ী গ্রন্থ ‘আল-কানুন ফিততির’। তিনি এ গ্রন্থে ৭৬০টি ওষুধের বর্ণনা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন।

চিকিৎসা সম্বন্ধীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের কারণে গ্রন্থটিকে ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে এক বিস্ময়কর সমন্বয় বলা হয়। এ গ্রন্থটির মৌলিকত্ব ও গুরুত্ব বিবেচনা করে ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদরা এটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল হিসেবে অভিহিত করেছেন। ‘কানুন ফিততিব্ব’ গ্রন্থটি ইবনে সিনাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

গ। উদ্দীপকের সোহেল ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়ে পড়াশুনা করছে। যে শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা দেওয়া হয় তাকে ইসলাম শিক্ষা বলে। ইসলামকে সঠিকভাবে জানা এবং তা মানার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।

ইসলাম শিক্ষা কুরআন, সুন্নাহ, তাওহিদ ও রিসালাতভিত্তিক। এতে শিক্ষার্থীরা কুরআন-হাদিসের আলোকে ইসলাম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করতে পারে। ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় জানা এবং ইবাদতের সঠিক নিয়মকানুন ও গুরুত্ব সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান লাভ করা যায়। সোহেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়েই পড়াশুনা করছে।

উদ্দীপকের সোহেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিষয়ে এম, এ শ্রেণির ছাত্র। সেখানে সে স্রষ্টার পরিচয় জানার পাশাপাশি পৃথিবীতে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করছে। এ বিষয়ে পড়াশুনা করার ফলে তার দুনিয়া ও পরকালের জীবন সুন্দর হবে বলে সে প্রত্যাশা করে। সোহেলের পঠিত বিষয়ের সাথে ইসলাম শিক্ষার মিল রয়েছে। ইসলাম শিক্ষা অর্জনের ফলে শিক্ষার্থীদের চরিত্র, আদর্শ ও চিন্তা-চেতনা এমনভাবে গড়ে ওঠে যেন জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইসলামের বিধিবিধান অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারে। এ শিক্ষা দুনিয়ার জীবনে মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আখিরাতে মুক্তির ব্যবস্থা করে। ইসলাম শিক্ষা আল্লাহ তায়ালার সাথে মানুষের সুসম্পর্ক তৈরি করে। সুতরাং বলা যায়, সোহেল ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়ে পড়াশুনা করছে।

ঘ। সোহেলের পিতার কর্মকান্ডে এটি স্পষ্ট যে, তিনি মস্তবের একজন শিক্ষক। মক্তব বলতে সাধারণত সে প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যেখানে ছোট ছোট মুসলিম ছেলেমেয়েদেরকে কুরআন, হাদিস ও ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়।

সাধারণত মসজিদের বারান্দায় বা মাদরাসার সাথে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এখানে মুসলিম শিশুদেরকে কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস, ওজু, গোসল, নামাজ, রোজা ও শিষ্টাচার ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। আল্লাহর ইবাদতের সঠিক নিয়মকানুন ও পদ্ধতি, পবিত্রতা-অপবিত্রতা ও হালাল-হারাম প্রভৃতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক জ্ঞান শিশুরা মস্তবেই পেয়ে থাকে। সোহেলের পিতা সকালবেলা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এ বিষয়গুলোই শিক্ষা দেন।

উদ্দীপকের সোহেলের পিতা অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। তিনি দশ বছর যাবৎ সকালবেলায় মসজিদে ছোট ছোট মুসলিম ছেলেমেয়েদেরকে কুরআন, হাদিস, পবিত্রতা ও ইবাদতের নিয়মকানুন শিক্ষা দেন। তার এসব কাজ মক্তবভিত্তিক শিক্ষাকেই নির্দেশ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মক্তব হলো ‘দারুল আরকাম’।

এখানে রাসুল (স) নিজে শিক্ষক হিসেবে সাহাবিদের ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। মক্তবের মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া এ শিক্ষার মাধ্যমে মুসলিম ছেলেমেয়েরা উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। তারা ইসলামের বিধিবিধান মেনে জীবন পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ হয়।

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞানার্জন, শিষ্টাচার ও নৈতিকতা শিক্ষা এবং আল্লাহর ইবাদতের সঠিক নিয়মকানুন ও পদ্ধতি শেখার জন্য মস্তবকেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।


ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ০৪

সামিনা ইসলাম শিক্ষা অধ্যয়ন করে জেনেছে, সুদূর ইয়েমেন থেকে একজন অলি ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং তিনি বিশেষত বাংলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও সংস্কৃতি বিস্তারে বিরাট অবদান রাখেন। সামিনার পিতা আরিফ একজন বিত্তবান মানুষ। তিনি গরিব-দুঃখীদের মধ্যে দান খয়রাত করেন, তবে সিয়াম পালন করেন না, কিন্তু এ বছর আর্থিক-শারীরিক ইবাদতটি সম্পন্ন করেন, যেটি একটি বিশেষ দেশে গিয়ে পালন করতে হয়।

ক. ইমাম গাজ্জালির (র) প্রধান পরিচয় কোনটি?
খ. সাওম ইবাদত লৌকিকতা পরিহারে সহায়তা করে-ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কোন অলির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে-ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আরিফ সাহেবের কর্মকাণ্ডের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।

০৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ইমাম গাজজালির (র) প্রধান পরিচয় হলো তিনি একজন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক।

খ। সাওম একমাত্র মৌলিক ইবাদত যেখানে লোক দেখানো বা অহংকার প্রদর্শন করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে সাওম অন্যতম। এটি এমন একটি ইবাদত যার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে দেবেন। যিনি সাওম পালন করেন, তিনি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করেন।

সাওম পালনকারীকে আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন। এখানে লোক দেখানো বা অন্যের কাছে নিজেকে প্রদর্শন করার কোনো সুযোগ নেই। সাওম পালন ব্যক্তিকে অন্যান্য ইবাদতে লৌকিকতা পরিহারে সহায়তা করে। আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ করেন- সাওম আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।

গ। উদ্দীপকে হযরত শাহজালাল (র) এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল (র) ১২৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ইয়েমেনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুরআন, হাদিস, ফিকহশাস্ত্রসহ ইসলামি জ্ঞানের প্রায় সব শাখায় গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এরপর তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোনিবেশ করেন। হযরত শাহজালাল (র) জীবনের একপর্যায়ে ইসলাম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসেন।

১৩০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতের দিল্লি থেকে বাংলাদেশের সিলেটে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বহু লোক শাহজালাল (র) এর হাতে ইসলামের দীক্ষালাভ করেছে। সামিনা ইসলাম শিক্ষা বই পড়ে তাঁর সম্পর্কেই জেনেছে। উদ্দীপকের সামিনা ইসলাম শিক্ষা বই পড়ে জেনেছে, সুদূর ইয়েমেন থেকে আল্লাহর একজন অলি ভারতবর্ষে এসেছিলেন।

তিনি বাংলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও ইসলামি সংস্কৃতির বিস্তারে অবদান রাখেন। এখানে হযরত শাহজালাল (র) এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার এবং ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মানুষকে এক আল্লাহর পথে দাওয়াত দিয়েছেন।

মধ্যযুগে বাংলা ভ্রমণ করা মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতার মতে, এদেশের অধিকাংশ লোক শাহজালাল (র) এর হাতেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। তিনি কুফর, শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবাই তাকে শ্রদ্ধা করতো। হযরত শাহজালাল (র) ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।

ঘ। আরিফ সাহেব ইসলামের মৌলিক ইবাদতসমূহ পরিপূর্ণভাবে পালন করে আংশিকভাবে পালন করেন, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। না ইসলাম পাঁচটি বুনিয়াদের (ভিত্তি) ওপর প্রতিষ্ঠিত।
১. সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল,
২. সালাত কায়েম করা,
৩. জাকাত দেওয়া,
৪. রমজানের সাওম পালন ও
৫. হজ পালন করা (বুখারি ও মুসলিম)।

সত্যিকারের ইমানদার হতে হলে ইসলামের সব মৌলিক ইবাদত পালন করা অত্যাবশ্যক। এগুলোর কোনোটিকে অস্বীকার করে প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না। অথচ সামিনার পিতা আরিফ সাহেব সাওম পালন করেন না।

উদ্দীপকের আরিফ সাহেব একজন বিত্তবান ব্যক্তি। তিনি গরিব-দুঃখীদের মধ্যে দান-খয়রাত করেন এবং হজ পালন করেন। অথচ একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদত সাওম পালন করেন না। অর্থাৎ তিনি ইসলামের বিধান আংশিকভাবে পালন করেন। পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আরিফ সাহেব সাওম পালন না করে আল্লাহর এ নির্দেশ লঙ্ঘন করেছেন। তার এ কাজটি ইসলামি শরিয়তের আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়।

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ইসলাম যে পাঁচটি মূলভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এর কোনোটিকে অস্বীকার করে প্রকৃত ইমানদার হওয়া যায় না। সত্যিকার মুমিন হতে হলে সবগুলো মৌলিক ইবাদত যথাযথভাবে পালন করা অত্যাবশ্যক।


আরও দেখুন: পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ১০ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল আর্টিকেল টি ভালো লাগলে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Leave a Comment