ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা বৃদ্ধির কৌশলগুলো বর্ণনা কর

ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা বৃদ্ধির কৌশল: কোনো ব্যবসায় সফলতা অর্জন দ্রুত ও সহজ নয়। তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সঠিক বাস্তবায়ন। তেমনি ই-কমার্স ব্যবসা বৃদ্ধির কতকগুলো কৌশল রয়েছে।

ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা বৃদ্ধির কৌশল

১। সুন্দর ও সাবলীল ওয়েবসাইট তৈরি: ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য প্রথমত ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। ওয়েবসাইট যে-কোনোভাবে তৈরি করলে হবে না। অবশ্যই তা গ্রাহকের জন্য অধিকভাবে ব্যবহারবান্ধব হতে হবে। ওয়েবসাইটটি যাতে মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ বা যে-কোনো মাধ্যম থেকে খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে। ভালো সাইট বানানোর পাশাপাশি অবশ্যই গ্রাহকের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যাতে সামনাসামনি থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই যেন গ্রাহক পণ্য বা সেবাটি অর্ডার করতে পারে।

২। ই-কমার্স বিজনেস ওয়েবসাইট মার্কেটিং: ওয়েবসাইট তৈরি ও পণ্য সাজানের পর মার্কেটিং-এর ব্যাপারে কাজ করতে হবে। কারণ গ্রাহককে সাইট ও পণ্য সম্পর্কে জানাতে হবে। এ জন্য ওয়েবসাইট-এর মার্কেটিং প্রয়োজন। ই-কমার্স বিজনেস-এর ব্রান্ডিং-এর জন্য নানা উপায়ে মার্কেটিং করা যায়। তবে গতানুগতিক ধারার পাশাপাশি নানা সৃজনশীল উপায় অবলম্বন করতে হবে। ফেসবুক মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং ইত্যাদির মাধ্যমে ব্র্যান্ড ও পণ্যের মার্কেটিং করতে পারে।

৩। ই-কমার্স মার্কেট প্লেসে বিজনেস পরিচালনা: ই-কমার্স বিজনেস-এর শুরুতে নিজের ব্যবসার ওয়েবসাইট তৈরি না করেও প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স মার্কেট প্লেসে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। বর্তমানে নানা ই-কমার্স মার্কেটে বিক্রেতা নিজের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে পারে। এর মাধ্যমে ই-কমার্স বিজনেস সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে পারে। পরবর্তীতে বিক্রেতার নিজস্ব ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনায় সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে তাকে সহায়তা করবে।

৪। নিজস্ব সাইট ও পণ্যের বাজার তৈরি: ই-কমার্স ব্যবসায় নিজস্ব ওয়েবসাইট, ব্র্যান্ড ও পণ্যের বাজার তৈরি করতে হবে। এখানে পণ্যের মানের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কেননা মানের ক্ষেত্রে যদি সমস্যা সৃষ্টি হয় পরবর্তীতে গ্রাহক ঐ বিক্রেতার থেকে পণ্য কেনা থেকে দূরে থাকবে। পাশাপাশি গ্রাহকের রিভিউ ই-কমার্স বিজনেস-এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা শুরুতে গ্রাহক পণ্যটি সরাসরি হাতে পায় না। তাই গ্রাহকের ভালো রিভিউ থাকলে পরবর্তীতে পণ্য বিক্রয় বৃদ্ধি ও সহজ হবে।

অন্যথায় ব্যবসা খুব সহজেই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই পণ্যের সঠিক মান নিশ্চিত করতে হবে। যদিও নিজস্ব ওয়েবসাইট ও পণ্যের বাজার তৈরির মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে বড় পুঁজির প্রয়োজন। তবে দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য এটার বিকল্প নেই।

৫। নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবারহ: ই-কমার্স ব্যবসা বৃদ্ধির অন্যতম ধাপ হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকের নিকট অর্ডারকৃত পণ্যের সরবারহ নিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। এটি বিক্রেতার ই-কমার্স ব্যবসা সফলতার জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

৬। পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে: সঠিকভাবে পণ্য সরবরাহ করার জন্য কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে কোনোভাবেই পণ্যের ক্ষতির আশঙ্কা তথা ভেঙে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া ও নির্ধারিত সময়ের পরে পণ্য সরবরাহ ইত্যাদি সমস্যা না হয়। এ জন্য কোনো কুরিয়ার সার্ভিসের সাথে চুক্তির মাধ্যমে এই সেবা নেওয়া যেতে পারে। ই-কমার্স বিজনেস-এর জন্য ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ করবে ও গ্রাহকের জন্য পণ্য প্রাপ্তি সহজ করে তুলবে। ফলে ব্যবসার সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।

৭। গ্রাহক আকৃষ্ট করা: ই-কমার্স ব্যবসায় সফলতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে গ্রাহককে ওয়েবসাইট ও পণ্যের ব্যাপারে আকৃষ্ট করা। যেহেতু ই-কমার্স ব্যবসাটি মূলত অনলাইন ভিত্তিক। সেক্ষেত্রে গ্রাহকের জন্য অনলাইনে কেনাকাটার সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সহজেই গ্রাহক বিক্রেতার সাইট থেকে পণ্য অর্ডার করতে পারে। ব্যবসায়িক ই-কমার্স সাইটগুলো গ্রাহকের জন্য যত বেশি সহজভাবে উপস্থাপন করা হবে তত বশি পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে।

৮। ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন: ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন-এর ব্যাপারে জেনে নিতে হবে। আজকে ই-কমার্স ব্যবসার নাম শুনে আর কাল থেকে ব্যবসা শুরু করে দিলেই ব্যবসা হয় না। যে-কোনো ব্যবসা শুরু করার আগে গাইডলাইন অনুসরণ করতে হয়। তেমনি ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন অনুসরণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা লাভ করা যাবে।

৯। ই-কমার্স মার্কেটিং: ই-কমার্স ব্যবসায় সফলতা অর্জনে মার্কেটিং-এর বিকল্প নেই। কেননা ওয়েবসাইটের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গ্রাহক না জানতে পারলে কীভাবে আপনার পণ্যটি অর্ডার করবে? তাই ই-কর্মাসে মার্কেটিং-এর উপর জোর দিতে হবে। পণ্য গ্রাহকের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এর দ্বারা গ্রাহক কীভাবে লাভবান হবে তা জানাতে হবে। কীভাবে কোথায় গ্রাহক এই পণ্যটি পাবে তা জানাতে হবে। এ জন্য অনলাইন অফলাইন সব মাধ্যমে ই-কমার্স মাকেটিং চালু রাখতে হবে। তা ছাড়া ই-কমার্স ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেড লাইসেন্স, নাম নিবন্ধন ইত্যাদি ডকুমেন্টস ও আইনি বিষয়গুলো আগে থেকেই সমাধান করে নিতে হবে, যাতে পরবর্তীতে কোনো ঝামেলা না হয়।

কোনো পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে তা নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচিত পণ্যের গ্রাহক কারা এবং এই পণ্যের চাহিদা কেমন তা যাচাই করতে হবে। পণ্যের চাহিদার আলোকে পণ্য উৎপাদন অথবা সোর্স-এর খোঁজ করতে হবে। পণ্যের মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ ও পরিবহন খরচের ব্যাপারে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।

পণ্যের গুণগত মান রক্ষার পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকের নিকট পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রাহকের থেকে কীভাবে পেমেন্ট পাওয়া যাবে তা নির্ধারণ করতে হবে। গ্রাহক সেবাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তাই দ্রুততম সময়ে গ্রাহকের সকল প্রকার জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি পণ্য ফেরত দিলে পেমেন্ট রিটার্ন-এর ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজ করতে হবে। এর মাধ্যমে ই কমার্স ব্যবসার ব্যাপারে গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।


আরও দেখুন: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের সমস্যাসমূহ বর্ণনা কর

আশাকরি “ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা বৃদ্ধির কৌশলগুলো বর্ণনা কর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Leave a Comment