উৎপাদনের উপকরণসমূহ বর্ণনা কর: উৎপাদন বলতে কোনোকিছু সৃষ্টি করাকে বোঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে কোনোকিছু সৃষ্টি করাকে উৎপাদন বোঝায় না। বরং কোনো দ্রব্যের উপযোগ সৃষ্টি করাকে বোঝায়। কোনো দ্রব্যের উৎপাদন করার জন্য বিভিন্ন উপকরণের প্রয়োজন হয়। উৎপাদনের চারটি প্রধান উপকরণ হচ্ছে ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন।
উৎপাদন: উৎপাদন বলতে কোনো দ্রব্য সৃষ্টি করা বোঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে উৎপাদন শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। উৎপাদন বলতে অর্থনীতিতে উপযোগ সৃষ্টি বোঝায়। বস্তুত মানুষ কোনো পদার্থ সৃষ্টি করতে পারে না, ধ্বংসও করতে পারে না। মানুষ শুধু প্রকৃতিপ্রদত্ত কোনো বস্তু বা পদার্থের রূপান্তর বা আকারগত পরিবর্তন ঘটিয়ে উপযোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধি করতে পারে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
অর্থনীতিবিদ ফ্রেসার (Fraser) বলেন, “If consumption means extracting utility from; then production means putting utility into.” অর্থাৎ, “যদি ভোগ বলতে উপযোগের ব্যবহার বোঝায়, তা হলে উৎপাদন বলতে উপযোগ সৃষ্টি বোঝায়।”
অধ্যাপক আলফ্রেড মার্শাল (Alfred Marshall) বলেন, “এ বস্তুজগতে মানুষ কেবল বস্তুকে পুনর্বিন্যাস করে তাকে অধিকতর ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে পারে।”
উদাহরণ: কৃষক বীজ হতে ফসল উৎপাদন করে, তাঁতি তুলা হতে কাপড় উৎপাদন করে। এসব দ্রব্যের বেশিরভাগ প্রকৃতির দান, মানুষ নিজের শ্রম মেধা ও মূলধন কাজে লাগিয়ে প্রকৃতিপ্রদত্ত বস্তুকে অধিকতর উপযোগী করে তোলে। সুতরাং উৎপাদন মানে উপযোগ বা কাম্যতা সৃষ্টি।
উৎপাদনের উপকরণসমূহ: কোনোকিছু উৎপাদনের জন্য যেসব বস্তু বা সেবাকর্ম প্রয়োজন হয় ঐগুলোকে উৎপাদনের উপকরণ বা উপাদান বলা হয়। এগুলো হলো ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন।
উৎপাদনের উপকরণসমূহ বর্ণনা কর
১. ভূমি: সাধারণত পৃথিবীর উপরিভাগকে ভূমি বলা হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে ভূমি বলতে শুধু ভূপৃষ্ঠকেই বোঝায় না, বরং প্রাকৃতিক সকল সম্পদকে বোঝায়। অর্থাৎ মাটির উর্বরাশক্তি, আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত, তাপ, জল, বাতাস, সূর্যের আলো, খনিজ সম্পদ, বন, মৎস্যক্ষেত্র, খালবিল, নদনদী, সমুদ্র প্রভৃতি যাবতীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ভূমির অন্তর্গত। এসব কিছুই প্রকৃতির দান। এটি উৎপাদনের একটি আদি ও মৌলিক উপাদান।
২. শ্রম: উৎপাদনকার্যে নিয়োজিত মানুষের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমকে শ্রম বলে। শ্রমের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতি থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে সেগুলোকে ব্যবহারের জন্য আরও উপযোগী করে তোলে। শ্রমও উৎপাদনের একটি আদি ও অপরিহার্য উপাদান। স্যার উইলিয়াম পেটি (Sir William Pitty) বিষয়টিকে আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করে বলেছেন, “উৎপাদনের শ্রমিক হলো পিতা এবং ভূমি হলো মাতা।”
৩. মূলধন: মানুষের শ্রম দ্বারা উৎপাদিত হয়ে যে বস্তু সরাসরি ভোগে ব্যবহৃত না হয়ে পুনরায় উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, তাকে মূলধন বলে। যেমন— যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, ঘরবাড়ি, কলকারখানা প্রভৃতি মানুষের উৎপাদিত দ্রব্য, যা উৎপাদনকার্যে ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে মূলধন বলা হয়।
৪. সংগঠন: আধুনিককালে উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদানগুলোকে একত্রিত করে এগুলোকে উৎপাদনকার্যে নিয়োগ করার উদ্যোগকে সংগঠন বলে। উৎপাদন পদ্ধতির জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সংগঠনের গুরুত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই দক্ষ সংগঠনের প্রয়োজন বেড়ে চলেছে। যারা এ কাজ করে তাদেরকে উদ্যোক্তা বা সংগঠক বলে। সংগঠককে উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়, পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয় এবং ব্যবসায়ের ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বহন করতে হয়।
উপসংহার: আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান বা উপকরণ স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। উৎপাদনকার্যে উপকরণসমূহকে যথাযথ নিয়োগ করতে পারলে উৎপাদন সাফল্যব্যঞ্জক হবে এটাই আশা করা যায়।
আরও দেখুন: বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
আরও দেখুন: আয় বলতে কী বোঝায়? আয়ের প্রকারভেদ আলোচনা কর
আরও দেখুন: অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায় আলোচনা কর
আরও দেখুন: সম্পদ কী? সম্পদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
আরও দেখুন: সম্পদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
আরও দেখুন: উপযোগ কাকে বলে? ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধিটি ব্যাখ্যা কর
আশাকরি “ উৎপাদনের উপকরণসমূহ বর্ণনা কর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।