একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর: বাজার হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান যেখানে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রী ক্রেতা বিক্রেতার সমাগমে ক্রয়-বিক্রয় সাধিত হয়। একচেটিয়া বাজার অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের একটি অংশ। একচেটিয়া বাজারে কমসংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকে এবং ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অপূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকে।
একচেটিয়া বাজারের সংজ্ঞা: যখন কোনো দ্রব্য একজন বিক্রেতা সরবরাহ করে তাকে একচেটিয়া বাজার বলে। অর্থাৎ যে বাজারে মাত্র একজন বা একটি বিক্রেতা সংঘ একটি দ্রব্য উৎপাদন করে, অন্য কোনো উদ্যোক্তা প্রবেশ করতে পারে না এবং দ্রব্যের কোনো বিকল্প নেই সে বাজারকে একচেটিয়া বাজার বলে। একচেটিয়া বাজারে একজন বিক্রেতা বা একটি বিক্রেতা সংঘ দ্রব্যটির সমগ্র যোগান নিয়ন্ত্রণ করে এবং দ্রব্যটির কোনো ঘনিষ্ঠ পরিবর্তক থাকে না। এরূপ অবস্থায় একচেটিয়া কারবারিকে কোনো প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয় না। ফলে দ্রব্যটির যোগান ও মূল্যের ওপর তার পূর্ণ ক্ষমতা থাকে।
একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
অধ্যাপক স্টিগলার-এর মতে, “একচেটিয়া কারবারি হচ্ছে এমন এক ধরনের দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যে দ্রব্যের কোনো নিকট পরিবর্তক নেই।”
অধ্যাপক স্যামুয়েলসন-এর মতে, “একচেটিয়া কারবারি হলো তার শিল্পের একমাত্র উৎপাদনকারী এবং তার দ্রব্যের খুব নিকট পরিবর্তক দ্রব্য উৎপাদনকারী কোনো শিল্প নেই।”
রবার্ট ফ্রাঙ্ক-এর মতে, “মনোপলি হলো এমন ধরনের বাজার কাঠামোর নাম যেখানে একজন মাত্র বিক্রেতা থাকে। তার দ্রব্য ও সেবার কোনো নিকট পরিবর্তক পুরো বাজারে আর নেই।”
একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ
একচেটিয়া বাজারে বিক্রেতার একক অভাব থাকায় বিশেষ কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-
১. ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা: একচেটিয়ামূলক বাজারে ক্রেতার সংখ্যা অসংখ্য। কিন্তু বিক্রেতা বা উৎপাদক মাত্র একজন।
২. দ্রব্যের প্রকৃতি: একচেটিয়ামূলক বাজারে বিক্রেতা একটিমাত্র দ্রব্য বিক্রয় করে।
৩. দামের ওপর প্রভাব: একচেটিয়ামূলক বাজারে বিক্রেতা দামকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৪. প্রবেশাধিকার: একচেটিয়ামূলক বাজারে নতুন প্রযোগীর প্রবেশের পথ রুদ্ধ থাকে।
৫. দ্রব্যের দাম: একচেটিয়ামূলক বাজারে দ্রব্যটি বিভিন্ন দামে ক্রয়-বিক্রয় হতে পারে। অনেক সময় একচেটিয়া কারবারি একই দ্রব্য বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করতে পারে।
৬. চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা: একচেটিয়ামূলক বাজারে চাহিদার সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক নয়। তাই চাহিদা রেখা ডানদিকে নিম্নগামী হয়।
৭. বিজ্ঞাপন: একচেটিয়ামূলক বাজারে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব কম। শুধু জনসংযোগের জন্য বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন হয়।
৮. ভারসাম্য উৎপাদন: একচেটিয়ামূলক বাজারে প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের সমতার বিন্দুতে উৎপাদনের ভারসাম্য নির্ধারিত হয়। উৎপাদনকে গড় ব্যয়ের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হয় না।
৯. মুনাফার পরিমাণ: একচেটিয়ামূলক বাজারে দীর্ঘকালেও কোনো প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করতে পারে।
উপসংহার: সুতরাং উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকলে যেকোনো বাজারকে একচেটিয়া বাজার বলা যায়। একচেটিয়া বাজারে একজনমাত্র বিক্রেতা থাকে। দ্রব্যের কোনো পরিবর্তক দ্রব্য থাকে না এবং অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও এ বাজারে প্রবেশ করতে পারে না।
আরও দেখুন: অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায় আলোচনা কর
আরও দেখুন: সম্পদ কী? সম্পদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
আরও দেখুন: সম্পদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
আরও দেখুন: উপযোগ কাকে বলে? ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধিটি ব্যাখ্যা কর
আরও দেখুন: উৎপাদন কাকে বলে? উৎপাদনের উপকরণসমূহ বর্ণনা কর
আরও দেখুন: রেখাচিত্রের সাহায্যে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধিটি ব্যতিক্রমসহ ব্যাখ্যা কর
আরও দেখুন: অর্থনীতিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
আশাকরি “একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।