বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের সমস্যাসমূহ: বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথ উন্নত নয় বলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অধিকাংশই নদীপথে সম্পাদিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় নৌ পরিবহনের গুরুত্ব বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে অসংখ্য খালবিল, নদীনালা থাকা সত্ত্বেও এদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত লাভ করতে পারে নি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের সমস্যাসমূহ
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়া সত্ত্বেও নদীপথের পরিবহন ব্যবস্থা নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। নিচে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের সমস্যা তুলে ধরা হলো-
১. নৌযানের স্বল্পতা: বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের গুরুত্ব অত্যধিক হলেও এদেশে প্রয়োজনের তুলনায় নৌযানের সংখ্যা খুবই কম। তাই নৌযানগুলোতে পণ্য ও যাত্রীর অত্যধিক ভিড় পরিলক্ষিত হয়।
২. মান্ধাতার আমলের নৌযান: এদেশের নৌপরিবহনের অন্যতম সমস্যা হলো পুরনো, চলার অযোগ্য এবং মান্ধাতার আমলের দেশীয় নৌকা। ফলে এসব নৌযান চলার পথে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
৩. নদীর গভীরতা হ্রাস: বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীতে পলি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে গিয়েছে। যা নৌযানগুলোর স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। অনেক নদীতে শুকনো মৌসুমে চর পড়ে বলে নৌযান চলতে পারে না।
৪. ঘাট ও জেটির অভাব: ঘাট ও জেটির অভাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম অসুবিধা। ফলে যাত্রী ও মালামাল ওঠানামায় খুব অসুবিধা হয়। বাংলাদেশে এমন অনেক ঘাট আছে যেখানে যাত্রীদের দাঁড়ানোরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
৫. পরিবহন ব্যয় ও মাসুল বেশি: যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার হার এবং নৌযানের ওপর নির্ধারিত মাসুলের হার খুব বেশি। এ হার প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৬. যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার অভাব: যাত্রীদের জন্য নৌপরিবহনে প্রয়োজনীয় বিশ্রামাগার ও পণ্য সংরক্ষণের জন্য গুদামঘরের তীব্র অভাব। যাত্রীদের এ অসুবিধা বর্ষাকালে তীব্রভাবে দেখা দেয়।
৭. নিরাপত্তার অভাব: বাংলাদেশে নৌপরিবহনে চুরি, ডাকাতি, দুর্ঘটনা প্রভৃতির হার এত বেশি যে যাত্রীরা নৌপরিবহনে নিরাপত্তার অভাববোধ করে। বিশেষ করে রাত্রিবেলায় লঞ্চ ডাকাতি এদেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
৮. নৌযান নির্মাণ ও মেরামতের অসুবিধা: এদেশের নৌপরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো নৌযান নির্মাণ ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় ডকইয়ার্ড ও শিপইয়ার্ডের অভাব। বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি নৌযান মেরামত কারখানা রয়েছে। এগুলোতেও আবার মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়।
৯. যন্ত্রাংশের অভাব: বাংলাদেশে নৌযানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ উৎপাদন হয় না বিধায় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে অনেক সময় লঞ্চ, স্টীমার অচল হয়ে পড়ে।
১০. নৌপথে চলাচলের সুযোগ-সুবিধার অভাব: বাংলাদেশের নৌপথে চলাচলকারী নৌযানগুলো বিভিন্ন প্রকার নৌপথের সুযোগ- সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। যেমন—বিপদ সংকেত, নৌপথে চলাচলকারী সংকেত প্রদর্শন, রাত্রিকালীন আলোর সংকেত ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক অভাব।
১১. দক্ষ চালক ও নাবিকের অভাব: নৌযান পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ চালক ও নাবিকের তীব্র অভাব রয়েছে। দক্ষ চালক বা নাবিক না থাকলে নৌযান দুর্ঘটনার কবলে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকে। এদেশে নাবিকদের ট্রেনিং-এর জন্য কোনো উন্নত প্রতিষ্ঠান নেই।
১২. বিনিয়োগকারীদের অভাব: বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে বেসরকারি বিনিয়োগকারিগণ নৌযানের বিনিয়োগে উৎসাহিত হয় না। ফলে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নৌপথে নৌযানের সংখ্যা যথেষ্ট কম।
উপসংহার: বাংলাদেশের নৌপরিবহন বর্তমানে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন। নদীপথের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে উপর্যুক্ত সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে একথা সত্য যে, এতসব সমস্যা মোকাবিলা করেও নৌপথ এদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
আরও দেখুন: অর্থনীতিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
আরও দেখুন: একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
আরও দেখুন: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের গুরুত্ব বর্ণনা কর
আরও দেখুন: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেলপথের গুরুত্ব
আরও দেখুন: বাংলাদেশের রেল পরিবহনের সমস্যাসমূহ
আরও দেখুন: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সড়কপথের গুরুত্ব
আশাকরি “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের সমস্যাসমূহ” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।