পণ্যের মান ও মূল্য তুলনা করার পদ্ধতি: পণ্যের মান বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উৎপাদন কাজ শুরু হবার আগ থেকে পণ্যের মান স্থির করতে হয়। ক্রেতাদের রুচি, অভ্যাস, আয় ইত্যাদি পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে তাদের ক্রয় অভ্যাসও দারুণভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। পণ্যের নিজস্ব আকার, রং, আকৃতি, প্যাটার্ন, অলংকার ইত্যাদিই হলো পণ্যের ডিজাইন। ক্রেতাদের পছন্দ, প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে পণ্যের ডিজাইন করতে হয়। পণ্যের ডিজাইন যথাযথ না হলে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে পারে। তাই পণ্যের উৎপাদককে পণ্যের ডিজাইনের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দিতে হয়।
পণ্য ডিজাইনের সাথে সাথে পণ্যের মান ব্যবস্থাপনাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে, ক্রেতা পণ্যের মানকে বেশি গুরুত্বের সাথে মূল্যায়নের মাধ্যমে পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তাই প্রতিষ্ঠান মান ব্যবস্থাপনার প্রতি জোর বাড়িয়ে ক্রেতা সন্তুষ্টি বিধান, কর্মীদের অংশগ্রহণ এবং ধারাবাহিক মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। বর্তমানে মান নির্ধারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক সংস্থা কাজ করছে। বর্তমান সময়টা তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আর এ সময় অনলাইন ব্যবসায়ের অনেক প্রসার হয়েছে। হয়তো কিছুদিন আগেও আমরা চিন্তা করতে পারতাম না, নিত্যদিনের জিনিসগুলো অনলাইনে অর্ডার করলে ঘরের দুয়ারে এসে হাজির হবে।
অনলাইন অথবা অফলাইন যে ব্যবসায়ই হোক না কেন, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পণ্যের মূল্যের ওপর ব্যবসায় সফলতা অনেকখানি নির্ভর করে। তাই পণ্যের মূল্য নির্ধারণে অনেক সচেতন হতে হয়।
প্রথমে জেনে রাখি মূল্য সম্পর্কে। পণ্যের উপযোগ পেতে একজন ক্রেতা যা খরচ করে সেটাই মূল্য অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দ্বারা যে পরিমাণ দ্রব্য কেনা যায়, তাকেই মূল্য বলে। যেমন ৫ টাকা দিয়ে একটি কলম পাওয়া যায়, তাহলে কলমের মূল্য ৫ টাকা।
বর্তমান যুগে ই-কমার্স এর ক্ষেত্রে পণ্যের মান অনুযায়ী মূল্যের তুলনা করতে হবে। যদি পণ্যের নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী পণ্যের মূল্য সঠিক হয় তাহলে সেটা বিক্রি করে সহজেই ক্রেতা সম্পর্ক উন্নয়ন করা যাবে এবং ব্যবসায় বেশিদিন ধরে চালিয়ে যাওয়া যাবে। আর যদি পণ্যের মান অনুযায়ী মূল্য সঠিক না হয় তাহলে ব্যবসায় বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই পণ্যের মান ও মূল্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তুলনা করতে হবে।
পণ্যের মান ও মূল্য তুলনা করার পদ্ধতি
১। প্রিমিয়াম (উচ্চ মূল্য/উচ্চ গুণমান): যখন একটি পণ্যের উচ্চ মূল্য তার গুণমানের সাথে মিলে যায়, তখন এটি একটি প্রিমিয়াম আইটেমের চিত্র তৈরি করে যা ভোক্তার একটি উপযুক্ত বিনিয়োগ বিবেচনা করে। যেমন- Apple এর কম্পিউটার বা মোবাইল পণ্য।
২। ওভারচার্জিং (উচ্চ মূল্য/মাঝারি গুণমান): যদি একটি পণ্যের গুণমান ভালো হয়, তবে পণ্যটি যা অফার করে তার চেয়ে দামের পরিমাণ বেশি হলে তা বিক্রি করা কঠিন হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানকে সাবধানে পদচারণা করতে হয়।
৩। রিপ অফ (উচ্চ দাম/নিম্ন মান): এ পর্যায়ে নিম্ন মানের পণ্য উচ্চ দামে বাজারে ছাড়া হয়। ফলে ক্রেতা অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় দক্ষতা কমে যায় এবং বাজার হারায়। ৪। উচ্চ মান (মাঝারি মূল্য/উচ্চ গুণমান): প্রচলিত জ্ঞান বলে যে, পণ্যের মূল্য পণ্যের গুণমানকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ এতে ব্যবসায় আরও সহজে লাভ করতে সক্ষম হবে। তবুও, প্রচারণার জন্য কিছুটা কম দামে একটি উচ্চ-মানের পণ্য অফার করা মূল্যবান হতে পারে। এতে ক্রেতা সন্তুষ্টি বাড়ে।
৫। গড় (মাঝারি মূল্য/মাঝারি গুণমান): এর নাম থেকে বুঝা যায়, এ পণ্যগুলো হলো “আপনি যা অর্থ দেন তা আপনি পান।” সাধারণত, ভোক্তারা জানে যে তারা একটি প্রদত্ত পণ্যের জন্য যে মূল্য দেয় তা পণ্য মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে ক্রেতাদের উৎসাহিত করতে প্রিমিয়াম পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে একটি কম দামের বিকল্প পণ্য অফার করা ভালো।
৬। মিথ্যা অর্থনীতি (মাঝারি মূল্য/নিম্ন গুণমান): এ কৌশলটি অবশ্যই ব্যবসায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে বেশি দামে খারাপ মানের পণ্য বিক্রি করা হয়। প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই ইকোনমি বা সাশ্রয়ী স্তরে যেতে হবে। অথবা পণ্য মান উন্নত করতে হবে অন্যথায় দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে টিকে থাকা সম্ভবপর হবে না।
৭। চমৎকার মান (কম দাম/উচ্চ গুণমান): বাজারে খুব দ্রুত প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন এবং বাজার দখলের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানই এ কৌশল ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে উন্নত মানসম্পন্ন পণ্য খুবই কম দামে বিক্রি করা হয়।
৮। ভালো মান (কম দাম/মাঝারি মানের): ভোক্তারা সর্বদা একটি সাশ্রয়ী মূল্যের, মানসম্পন্ন পণ্যের সন্ধানে থাকে। দীর্ঘমেয়াদী গ্রাহকের আনুগত্য বাড়ানোর জন্য, প্রতিষ্ঠান মাঝারি স্তরের পণ্যগুলোকে সামান্য কম মূল্যে বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল্যবান হতে পারে।
৯। সাশ্রয়ী (কম মূল্য/নিম্ন গুণমান): এটি একটি কম বাজেটের মূল্য নির্ধারণ কৌশল। এক্ষেত্রে কম দামে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করা হয়। ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি এবং মূল্য সংবেদনশীল ক্রেতা ধরে রাখতে এটি খুবই কার্যকরী কৌশল।
পরিশেষে বলা যায় যে, পণ্যের মান এবং মূল্য তুলনা করার জন্য ওপরের পদ্ধতিগুলোর ব্যবহার করা ই-কমার্স এর ক্ষেত্রে সাফল্য লাভের দুয়ার উন্মোচনে সহায়তা করবে।
আরও দেখুন: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের সমস্যাসমূহ বর্ণনা কর
আশাকরি “পণ্যের মান ও মূল্য তুলনা করার পদ্ধতিগুলো বর্ণনা কর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।