সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ১০ম অধ্যায়: প্রতিটি সমাজব্যবস্থার মধ্যেই বিচ্যুত আচরণ ও অপরাধের বীজ নিহিত থাকে। সমাজকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে হলে বিচ্যুত আচরণ ও অপরাধের ধারণা, কারণ এবং প্রতিকারের উপায় চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এ কারণে বর্তমান অধ্যায়ে বিচ্যুতিমূলক আচরণের ধারণা, বৈশিষ্ট্য, কারণ, তত্ত্ব এবং অপরাধের ধারণা, ধরন, কারণ, অপরাধ ও বিচ্যুতিমূলক আচরণের পার্থক্য এবং প্রতিকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ১০ম অধ্যায়
প্রশ্ন-১. বিচ্যুতিমূলক আচরণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সমাজে প্রচলিত আইন-কানুন, মূল্যবোধ ও রীতিনীতির পরিপন্থি আচরণকে বিচ্যুতিমূলক আচরণ বলে। প্রতিটি সমাজেই কতকগুলো নিজস্ব আচার-আচরণ, রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ থাকে। সে অনুসারে সমাজ ব্যক্তির কাছ থেকে যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে বলা হয় কাঙ্ক্ষিত বা প্রত্যাশিত আচরণ। এই প্রত্যাশিত আচরণের বাইরে ব্যক্তি যে সকল আচরণ করে তাই বিচ্যুত আচরণ। সুতরাং বিচ্যুতি বলতে মূলত এমন সব আচরণকে বোঝায়, যা স্বাভাবিক ও কাঙ্ক্ষিত আচরণের পরিপন্থি।
প্রশ্ন-২. শিক্ষককে সালাম না দেয়া কি অপরাধ? বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর: শিক্ষককে সালাম না দেয়া অপরাধ নয়, এটি বিচ্যুত আচরণ। আমরা জানি, দেশের আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত শাস্তিযোগ্য কাজকে অপরাধ বলে। অন্যদিকে সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধের পরিপন্থি আচরণকে বিচ্যুতিমূলক আচরণ বলে।
আমাদের রাষ্ট্রে শিক্ষককে সালাম না দেয়ার জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয় নি। অর্থাৎ- আইনের দৃষ্টিতে এটি অপরাধ নয়। কিন্তু আমাদের সমাজে প্রচলিত রীতি হচ্ছে, শিক্ষককে শ্রদ্ধা করা এবং দেখা হলে সালাম দেয়া। সুতরাং কেউ যদি শিক্ষককে সালাম না দেয় তাহলে সে সমাজে প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করল। অর্থাৎ- সে বিচ্যুতিমূলক আচরণ করল।
প্রশ্ন-৩. ডুর্খেইম বর্ণিত কঠোর ও সংক্রামিত নৈরাজ্যের ধারণা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: হঠাৎ কোনো পরিবর্তনের ফল হচ্ছে কঠোর নৈরাজ্য এবং ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়াকে সংক্রামিত নৈরাজ্য বলে। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের মধ্যে যখন হঠাৎ করে কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয় তখন সে অবস্থাকে কঠোর নৈরাজ্যে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
যেমন- ব্যবসায়িক সংকট, ধর্মঘট, হরতাল ইত্যাদি। অন্যদিকে সংক্রামিত নৈরাজ্য হলো রাষ্ট্র কিংবা শিল্পভিত্তিক সমাজে একবার ঘটার পর ক্রমান্বয়ে তা রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে সংক্রামিত হওয়া। যেমন- রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী মনোভাব।
প্রশ্ন-৪. জৈবিক তাড়না কীভাবে বিচ্যুতিমূলক আচরণের সৃষ্টি করে?
উত্তর: জৈবিক তাড়না থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ ছোট ছোট সমাজ অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে যা বিচ্যুতিমূলক আচরণকেই বোঝায় । প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই জৈবিক তাড়না কাজ করে। এ তাড়নাগুলো সমাজের নিয়ম-নীতি মেনে চলতে চায় না।
ফলে জৈবিক তাড়না এবং সমাজের নিয়ম-নীতির মধ্যে একটা সংঘাতের সৃষ্টি হয়। সামাজিক রীতি-নীতিগুলো মানুষের জৈবিক তাড়নাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। পক্ষান্তরে, জৈবিক তাড়নাগুলো সামাজিক রীতি-নীতি মেনে নিতে চায় না। মানুষ যখন তাদের জৈবিক তাড়নাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় তখন বিচ্যুতিমূলক আচরণের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন-৫. ‘সকল অপরাধই বিচ্যুতি, সকল বিচ্যুতিই অপরাধ নয়’– ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অপরাধের মধ্যে বিচ্যুতি নিহিত থাকে বলে সকল অপরাধই বিচ্যুতি। পক্ষান্তরে বিচ্যুতির মধ্যে অপরাধ নিহিত থাকে না বলে সকল বিচ্যুতিই অপরাধ নয়। সকল অপরাধই বিচ্যুতি কিন্তু সকল বিচ্যুতিই অপরাধ নয়। সমাজস্বীকৃত আচরণের পরিপন্থি যেকোনো আচরণই বিচ্যুতি, আর ঐ বিচ্যুতিমূলক আচরণ যখন আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য হয় কেবল তখনই তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
যেমন- একজন বখাটে কিশোর যদি ধূমপান করে, তখন তা বিচ্যুতিমূলক আচরণ, অপরাধ নয়। কিন্তু যদি সে ইভটিজিং বা ছিনতাইয়ে লিপ্ত হয় তাহলে তা বিচ্যুতির পাশাপাশি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্যই বলা হয়, সকল অপরাধই বিচ্যুতি, সকল বিচ্যুতিই অপরাধ নয়।
প্রশ্ন-৬. অপরাধ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: অপরাধ বলতে সামাজিক আইন বা নীতিমালার লঙ্ঘনকে বোঝায়। সুনির্দিষ্ট অর্থে দেশের আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত শাস্তিযোগ্য কাজকেই অপরাধ বলা হয়। দেশে প্রচলিত সরকারি আইন-কানুন বা বিধি-বিধানের পরিপন্থি কোন কাজ করাকে আইনের চোখে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সামাজিক দিক থেকে ক্ষতিকর এমন কিছু করার নামই অপরাধ।
প্রশ্ন-৭. ‘অপরাধ একটি সামাজিক ঘটনা’-ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সমাজকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয় বলেই অপরাধ একটি সামাজিক ঘটনা। অপরাধ কোনো সহজাত প্রবৃত্তির ফল নয়। বরং এটি একটি সামাজিক ঘটনা। পৃথিবীতে জন্মের সময় কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। যেহেতু আইনের লঙ্ঘণ হলো অপরাধ।
তাই বলা যায়, একজন মানুষ পৃথিবীতে আবির্ভাবের সাথে সাথে আইনের স্পর্শ পায় না। জন্মের পর ব্যক্তি পরিবারের সংস্পর্শে আসে এবং সেখানেই লালিত-পালিত হয়। এরপর সে সমাজের এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রের সংস্পর্শে আসে। রাষ্ট্র যেহেতু আইন প্রণয়ন করে, তাই মানুষ যে আইন লঙ্ঘন করে সেটা সমাজেরই সৃষ্টি। সুতরাং অপরাধ অবশ্যই সামাজিক ঘটনা।
প্রশ্ন-৮. ভদ্রবেশী অপরাধ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আর্থ-সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত অপরাধকে ভদ্রবেশী অপরাধ বলে। ভদ্রবেশী অপরাধ বলতে নিরবে সংঘটিত হওয়া অপরাধসমূহ বোঝায়। যেমন- আয়কর ফাঁকি, জালিয়াতি, তহবিল তছরুপ, ট্রেড মার্ক নকল করা ইত্যাদি। এগুলোকে বলা হয় ভদ্রবেশী অপরাধ। আর্থ-সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত না হয়েও কেউ ভদ্রবেশী অপরাধ করতে পারে। ভদ্রবেশী অপরাধগুলো অনেকটা নীরবে ও গোপনে সংঘটিত হয়। তাই এ ধরনের অপরাধ শনাক্ত করা অনেকটা জটিল হলেও অসম্ভব নয়।
প্রশ্ন-৯. কিশোর অপরাধ কী?
উত্তর: কিশোর অপরাধ হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ। কিশোর-কিশোরী কর্তৃক সংঘটিত সামাজিক মূল্যবোধ, রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক এবং আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থী যেকোনো কাজকেই কিশোর অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। দারিদ্র্য, পারিবারিক অশান্তি, কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র, অসৎ সঙ্গ প্রভৃতি কারণে কিশোর-কিশোরীরা নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।”
প্রশ্ন-১০. অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে পারিবারিক পরিবেশের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অস্বাস্থ্যকর ও অস্বাভাবিক পারিবারিক পরিবেশ অপরাধ সংঘটনের একটি কারণ। একটি সুন্দর, সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ যেমন একটি শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে তেমনি বস্তি জীবনের অস্বাস্থ্যকর ও অস্বাভাবিক পরিবেশের প্রভাবে একটি শিশু অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।
এজন্যে ঢাকা শহরের বস্তি এলাকায় অপরাধ প্রবণতার হার বেশি। সুতরাং বলা যায়, পারিবারিক পরিবেশ অপরাধ প্রবণতার পিছনে ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক পরিবেশের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন-১১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে অপরাধ প্রবণতার জন্ম দিতে পারে?
উত্তর: ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অপরাধ প্রবণতার জন্ম দিতে পারে। সুষ্ঠু শিক্ষার অভাবে শিশু বিভিন্ন সামাজিক গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যাবলি অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষাব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হলে এটির মাধ্যমেই শিশুরা সমাজবিরোধী হয়ে উঠতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরিবেশ থেকে শিশুরা আসার ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থাকতে পারে। ফলে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সংঘাত হতে পারে। এ কারণে মানসিকভাবে কোনো শিশু বিপর্যয়ের শিকার হয়ে অপরাধ সংঘটনে লিপ্ত হতে পারে।
প্রশ্ন-১২. শ্রেণি বৈষম্য কীভাবে অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টি করে?
উত্তর: শ্রেণি বৈষম্যের কারণে মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়। এর থেকে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে মানুষ নানা অপরাধে লিপ্ত হয়। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে একদিকে যেমন পূর্বের বন্ধন খসে পড়ছে, অপরদিকে সম্পদের অসম বণ্টনের ফলে সমাজে শ্রেণি সম্পর্ক সংঘর্ষশীল হচ্ছে। এর সাথে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষের কারণে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে। এ শ্রেণি-বিদ্বেষ আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ও মানুষ অপরাধী হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন-১৩. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কীভাবে অপরাধ প্রবণতা রোধে কাজ করে?
উত্তর: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিকে অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দিয়ে অপরাধ প্রবণতা রোধে কাজ করে। সব ধর্মের মূল বাণীর মধ্যে অভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। সততা, অন্যের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা, মানবপ্রেম, নিষ্ঠা, নিজ নিজ ধর্মের নিয়মনীতি পালন করার শিক্ষা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে থাকে। তাই যে ব্যক্তি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগুলো মেনে চলে সে অন্যায় ও অসৎ কর্ম থেকে বিরত থাকে। কারণ সে বিশ্বাস করে তার কোনো অপকীর্তি সৃষ্টিকর্তার চোখ এড়াতে পারবে না। এভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অপরাধ প্রবণতা রোধে কাজ করে।
প্রশ্ন-১৪. ‘অপরাধ প্রতিরোধের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অর্থনৈতিক উন্নয়নে বা অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ সম্ভব। অপরাধের জন্য অনেক সময় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়। আবার পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও অপরাধ প্রবণতার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। তাই দেশের জন্য এমন একটি যুক্তিযুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়, যেখানে সম্পদ ও সুযোগের সদ্ব্যবহার এবং তার ন্যায্য তথা সুষম বণ্টন ত্বরান্বিত হতে পারে। সমাজে যদি শোষণ ও অবিচার দূরীভূত হয়, তবে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং অপরাধ প্রবণতা দূরীভূত হবে।
প্রশ্ন-১৫. প্যারোেল ও প্রবেশন দুটিই সংশোধনমূলক ব্যবস্থা কিন্তু প্রেক্ষাপট ভিন্ন— বুঝিয়ে লিখো।
উত্তর: কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যখন সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হয় এবং আদালত যখন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় তখন কারাগারে প্রেরণ না করে তার চারিত্রিক সংশোধনের জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া হয় তার নাম প্রবেশন। অন্যদিকে কোনো অপরাধী কারাগারে শাস্তি ভোগের একটি সময় অতিক্রম করলে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থাই হচ্ছে প্যারোল। সুতরাং দেখা গেল, দুটিই সংশোধনমূলক ব্যবস্থা কিন্তু প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
প্রশ্ন-১৬. অপরাধ দমনে প্রশাসনিক পদক্ষেপের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রশাসন অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখতে পারবে। অপরাধ দমনে প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন উদ্যোগ এবং কর্মসূচি গ্রহণ করলে এর প্রবণতা হ্রাস পাবে। বিশেষ করে। ব্যাপারে অপরাধীর শাস্তি বিধানে বিচার বিভাগকে যত্নবান হতে হবে। অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার নীতি পরিহার করতে হবে। কারণ এতে শাস্তি গ্রহণে অপরাধী যেমন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয় তেমনি জনগণও বিচারের ফলাফল জানার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই অপরাধ প্রতিরোধে দ্রুত বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে।
প্রশ্ন-১৭. অপরাধ দমনে গণমাধ্যমের ভূমিকা কী? বর্ণনা করো।
উত্তর: অপরাধ দমন করতে গণমাধ্যমগুলো অপরাধীদের কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবি। অপরাধের চিত্র এবং পাশাপাশি অপরাধীর শাস্তি যদি পূর্ণাঙ্গভাবে গণমাধ্যমগুলো তুলে ধরে তাহলে সমাজ তথা দেশে অপরাধ হ্রাস পাবে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘পরিপ্রেক্ষিত’, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন-এর ‘তালাশ’, এটি এন বাংলার ‘ক্রাইম ওয়াচ’ প্রভৃতির মতো কিছু অনুষ্ঠান সমাজে অপরাধ দূরীকরণ তথা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন-১৮. ‘সামাজিক বিচ্যুতি সৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপার্জনক্ষম হওয়াটা অনেকাংশে দায়ী।’ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সামাজিক বিচ্যুতির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপার্জনক্ষম হওয়া। আধুনিক সমাজে স্বামী- স্ত্রী উভয়েই আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে চায়। ফলে তারা তাদের সন্তান-সন্ততির কথা ভুলে গিয়ে সারা দিন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকে। এতে সন্তান-সন্ততি তাদের পিতামাতার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়। স্নেহবঞ্চিত সন্তানসন্ততিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমাজ পরিপন্থি কাজে জড়িয়ে পড়ে যা সামাজিক বিচ্যুতির সৃষ্টি করে। তাই একথা বলা যায় যে, সামাজিক বিচ্যুতি সৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপার্জনক্ষম হওয়াটা অনেকাংশে দায়ী।
প্রশ্ন-১৯. অপরাধের পেছনে অর্থনৈতিক কারণ অধিক দায়ী কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে অপরাধ জন্ম নেয় বলে অপরাধের পিছনে অর্থনৈতিক কারণ অধিক দায়ী। অপরাধের একটি অন্যতম কারণ হলো অর্থনীতি। গরিব শ্রেণির মানুষের মধ্যে অপরাধী বেশি দেখা যায়। আর গরিবরা অনেক সময় আর্থিক কারণে অপরাধ করে।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যেমন অপরাধ সংঘটিত হতে পারে তেমনি অত্যধিক ধন লাভে এবং আর্থ-সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত লোকের একটি অংশ তাদের পেশাগত কাজে অপরাধ করে থাকে। এ কারণে অপরাধের পেছনে অর্থনৈতিক কারণকে অধিক দায়ী করা হয়।
প্রশ্ন-২০. অপরাধী হয়ে ওঠার পেছনে সামাজিক রীতিনীতির প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধহীনতা অপরাধী তৈরির পিছনে প্রভাব বিস্তার করে। মানুষ জন্মের পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করে। ফলে সে প্রচলিত রীতিনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। কোনো ব্যক্তি নতুন কোনো সংস্কৃতিতে গেলে নতুন পরিবেশ মোকাবিলা করে। ফলে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত সাংস্কৃতিক সংঘাতের সম্মুখীন হয়। এভাবেই সামাজিক রীতিনীতির প্রভাবে কেউ কেউ অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।
আশাকরি “বিচ্যুতিমূলক আচরণ এবং অপরাধ – সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ১০ম অধ্যায়” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন।