ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি বর্ণনা কর: মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পাদিত যাবতীয় অর্থনৈতিক বৈকার্যক্রমই হলো ব্যবসায়। সাধারণত ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের পরিমণ্ডলকে ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি হিসেবে ধরা হয়।ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত।
ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি বর্ণনা কর
মানুষের বস্তুগত ও অবস্তুগত চাহিদা পূরণের জন্য কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার সাথে জড়িত যাবতীয় কার্যাবলিই ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধিভুক্ত। ব্যবসায়ের সুবিন্যস্ত আওতাকে যে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায় নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১. শিল্প: পণ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত সকল প্রকার কার্যাবলিকে শিল্প বলা হয়। শিল্প হচ্ছে উৎপাদনের প্রক্রিয়াবিশেষ। এর কাজ হলো প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদসমূহ উত্তোলন, শোধন ও প্রস্তুতকরণ। শিল্পজাত সেবাও শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। শিল্প, পণ্যের রূপগত ও গুণগত পরিবর্তনের সাহায্যে নতুন নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। সুতরাং শিল্প বলতে আমরা বুঝি কোনো পণ্য বা সেবার উৎপাদন, নিষ্কাশন, উত্তোলন, শোধন, প্রস্তুতকরণসংক্রান্ত সবধরনের কর্মপ্রচেষ্টাকে। শিল্পকে আবার কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-
(i) প্রজনন শিল্প: যে শিল্পে প্রজনন প্রক্রিয়ায় সম্পদ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করা হয় তাকে প্রজনন শিল্প বলা হয়। যেমন— পশু-পাখি, মৎস্য, ফলমূল ইত্যাদি প্রজনন শিল্পের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হয়।
(ii) নিষ্কাশন শিল্প: যে প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদাদি আহরণ বা উত্তোলন করা হয় তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলা হয়। যেমন- বন হতে কাঠ সংগ্রহ; খনি হতে তেল, গ্যাস, লোহা, সোনা ইত্যাদি উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিষ্কাশন শিল্পের আওতাভুক্ত।
(iii) নির্মাণ শিল্প: যে প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ, রেলপথ, দালানকোঠা ইত্যাদি নির্মাণ করা হয় তাকে নির্মাণ শিল্প বলা হয়।
(iv) উৎপাদন শিল্প: যে প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদাদি প্রক্রিয়াজাত করে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয় তাকে উৎপাদন শিল্প বলা হয়।
(v)সেবা পরিবেশন শিল্প: দেশের যেসব জনহিতকর প্রতিষ্ঠান উক্ত দেশের জনগণকে সেবার উপকরণাদি সরবরাহের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে সেগুলোকে সেবা পরিবেশন শিল্প বলা হয়। যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানীয় জল প্রভৃতি উৎপাদন ও সরবরাহের কাজে নিয়োজিত শিল্পসমূহ সেবা পরিবেশন শিল্প।
২. বাণিজ্য: বাণিজ্য ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান শাখা। শিল্পে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্যসমূহ বণ্টন করা এবং বণ্টনকালে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে ভোগকারীদের নিকট পণ্য পৌঁছে দেওয়া হলো বাণিজ্যের প্রধান কাজ। অর্থাৎ বাণিজ্য হলো উৎপাদক ও ভোগকারীদের কাছে পণ্যদ্রব্য এবং সেবাদি বিনিময় বা আদান-প্রদানের সমন্বিত প্রক্রিয়া। বাণিজ্য পণ্য বিনিময়কালে সৃষ্ট ব্যক্তি, স্থান, কাল, ঝুঁকি ও পুঁজিগত সমস্যাদি ক্রমানুসারে ট্রেড, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিমা ও ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে অপসারণ করে। এ কারণে বাণিজ্যের আওতা ব্যাপক ও বিস্তৃত।
৩. প্রত্যক্ষ সেবা: অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে শিল্প, বাণিজ্য, শিল্প ও বাণিজ্যের সহায়ক কার্যাবলি ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদারি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ যেসব সেবামূলক কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকেন সেগুলোকে প্রত্যক্ষ সেবা বলা হয়। যেমন- ডাক্তারি, আইনবৃত্তি, হিসববৃত্তি, সাংবাদিকতা ও আরও অন্যান্য পেশাভিত্তিক কার্যাবলি।
৪. শিল্প ও বাণিজ্যের সহায়ক কার্যাবলি: শিল্প ও বাণিজ্য কাজ পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, সম্প্রসারণ, পণ্যের উৎকর্ষতা আনয়ন, মান সংরক্ষণ ইত্যাদিকে শিল্প ও বাণিজ্যের সহায়ক কার্যাবলি বলা যায়। পণ্যের প্রচার, পণ্য গবেষণা, রাজার গবেষণা, পরিবহন, বিশ, বিক্রয়িকতা ও ব্যবস্থাপনীয় কর্মকাণ্ড এর আওতাভুক্ত।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বস্তুগত ও অবস্তুগত অভাব বা চাহিদা মোচনের নিমিত্তে এবং মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বানুষ যেসব কাজ সম্পাদন করে সেগুলো ব্যবসায়ের পরিধির মধ্যে পড়ে। পণ্যদ্রব্য ও সেবাদির অংশগ্রহণ ও উৎপাদন থেকে আরম্ভ করে ক্রেতা ও ভোক্তাদের নিকট বণ্টন পর্যন্ত যাবতীয় ও আনুষঙ্গিক কার্যকলাপ ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত।
✔ আরও দেখুন: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের সমস্যাসমূহ বর্ণনা কর
✔ আরও দেখুন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ের অবদান
✔ আরও দেখুন: ব্যবসায়ের কার্যাবলি আলোচনা কর
আশাকরি “ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি বর্ণনা কর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।