সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া – সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়

সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়: ব্যক্তির জীবনে সামাজিকীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে সমাজে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলে। এই প্রক্রিয়া জীবনভর চলতে থাকে। বর্তমান অধ্যায়ে সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা, সামাজিকীকরণের মাধ্যমসমূহ, সামাজিকীকরণে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে।


সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়

প্রশ্ন-১. সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন মানব শিশু ক্রমশ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। অর্থাৎ- সামাজিকীকরণ হচ্ছে একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। কেননা, জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন বাহন ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর সামাজিকীকরণ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সঙ্গীদল শিশুর সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া তাই সামাজিকীকরণকে একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রশ্ন-২. সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ প্রক্রিয়া ব্যক্তিকে দলের অন্য সদস্যদের সাথে মিলেমিশে থাকার ক্ষেত্রে সক্ষম করে তোলে। একজন ব্যক্তি যদি পুরোপুরি সামাজিকীকৃত হয় তবে সে সমাজের গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝতে শেখে এবং ব্যক্তি স্বার্থের ওপরে সমাজের স্বার্থকে স্থান দেয়। এছাড়া সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করার ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগায়। ফলে পারস্পরিক দূরত্ব দূর হয় এবং ব্যক্তি জীবন তথা সামাজিক জীবন সুন্দর ও মধুর হয়।

প্রশ্ন-৩. সমাজকে সুন্দর করতে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন কেন?

উত্তর: সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সমাজস্থ ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে উৎসাহ জোগায়। যার ফলে পারস্পরিক দূরত্ব দূরীভূত হয়ে ব্যক্তিজীবন তথা সামাজিক জীবন সুন্দর ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া ব্যক্তিকে দলের অন্য সদস্যদের সাথে মিলেমিশে থাকার ক্ষেত্রে সক্ষম করে তোলে।

গোষ্ঠীজীবন ও সামাজিকীকরণ ছাড়া ব্যক্তির পক্ষে সমাজে বসবাস বা টিকে থাকা সম্ভব নয়। সামাজিকীকরণের জন্যই ব্যক্তি সমাজের সদস্য হিসেবে তার নিজের জন্য অসম্মানজনক বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কাজ করতে উৎসাহী হয় না। এসব কারণে সমাজকে সুন্দর করতে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া অপরিহার্য।

প্রশ্ন-৪. ছেলেমেয়েরা বড় হয়েও শিশুসুলভ আচরণ ও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে কেন?

উত্তর: পারিবারিক সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের অভাবে ছেলেমেয়েরা বড় হয়েও শিশুসুলভ আচরণ ও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিছু পরিবারে বাবা-মা তাদের সন্তানদের প্রতি অতিরিক্ত কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। তারা সন্তানদের সব সময় আগলে রাখতে চান এবং সন্তানদের সব কাজ নিজেরাই করে দিতে পছন্দ করেন। তারা ছেলেমেয়েদের ঘরের বাইরে যেতে দিতে রাজি নন। এ ধরনের পরিবারের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েও শিশুসুলভ আচরণ করে এবং সব সময় অসহায় বোধ করার ফলে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন-৫. ‘সামাজিকীকরণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ’— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সামাজিকীকরণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ধর্মই সামাজিক জীবন সম্পর্কে বিশেষ ধরনের আদর্শ পোষণ করে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে আধ্যাত্মিক প্রচারণার সাথে সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবন গঠনের বিভিন্ন আদর্শ প্রচারিত হয়।

তাছাড়া শিশু-কিশোরেরা পরিবারে অন্যদের ধর্মীয় আচরণ, যেমন— কুরআন শরিফ, বাইবেল, ত্রিপিটক প্রভৃতি পাঠ করতে দেখে ও শোনে। এসব বিষয় শিশুর ভবিষ্যৎ ধর্মীয় জীবনকে প্রভাবিত করে। ঈদ, পূজা, প্রভৃতি ধর্মীয় উৎসবের নানা কার্যক্রম শিশুমনে ধর্মানুভূতির পাশাপাশি ঐক্য, সংহতি এবং সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়।

প্রশ্ন-৬. সামাজিকীকরণে অর্থনীতি কীরূপ ভূমিকা পালন করে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: অর্থনীতি সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের দ্বারা সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। একটি সমাজে যদি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়, তবে সেই সমাজের মানুষের জীবনযাত্রার মানও পরিবর্তিত হয়। সেইসাথে পরিবর্তিত হয় সামাজিক রীতি-নীতি ও আচার-অভ্যাস এবং উৎপাদন ব্যবস্থা। এসব বিষয় সামাজিকীকরণে বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে মানুষ আর্থিক লেনদেন, অর্থব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় শিখে থাকে।

প্রশ্ন-৭. ‘পিতামাতার মধ্যে সুসম্পর্ক শিশুর ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়’— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পিতামাতার মধ্যে সুসম্পর্ক শিশুর ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য একান্ত প্রয়োজন। মানুষ সাধারণত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ও বেড়ে ওঠে। শিশু তার বাবা-মাকে খুব আপন মনে করে এবং তাদের কোমল মনে বাবা-মায়ের সংস্কৃতি সহজেই প্রবেশ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।

এজন্য দেখা যায়, বাবা-মা যে আদর্শ ও সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে, শিশুরাও সাধারণত সেই আদর্শ ও সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী হয়। আর এটি তখনই সম্ভব হবে যখন পিতা-মাতার মধ্যে সুসম্পর্ক থাকবে। পিতা-মাতার মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকলে পরিবারে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও আচরণ নির্ধারণের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে। আর পিতা-মাতার মধ্যে দ্বন্দ্ব বা ঝগড়া থাকলে শিশুর মনের ওপর তার প্রভাব পড়ে।

প্রশ্ন-৮. সামাজিকীকরণ কীভাবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত হয়ে উঠছে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: তথ্য প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি মানুষকে বৈশ্বিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছে। বিশ্বায়নের ফলে আজ সারা বিশ্বের মানুষ যেন একটি পরিবারের সদস্য। মোবাইল ফোন, স্যাটেলাইট চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম (Facebook, Twitter, Instagram ইত্যাদি) এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ সহজেই সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। এতে তারা চিন্তাধারা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, জীবনধারা, সমাজ, অর্থনীতি, ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছে। আর এ কারণেই সামাজিকীকরণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত হয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন-৯. সামাজিকীকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা কীরূপ? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: গণমাধ্যম আধুনিককালের সমাজ নিয়ন্ত্রণের এক শক্তিশালী মাধ্যম। আধুনিককালে অধিকাংশ পরিবারেই সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, কম্পিউটার ইত্যাদির কোনো না কোনোটির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এসব মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ, বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদি শিশুদেরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এর ফলে শিশু-কিশোররা নিজেদেরকে সমাজ-সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে শেখে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, বিজ্ঞানমনস্কতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকশিত হয়।

প্রশ্ন-১০. সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে ভূমিকা রাখে।

উত্তর: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি সামাজিক আদর্শ শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিশুকে সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষক, সহপাঠী, কর্মচারী, বিদ্যালয়ের পরিবেশ, প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধ প্রভৃতির সংস্পর্শে আসে।

এসব উপাদানই শিশুর আচরণকে প্রভাবিত করে, যার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে নেতৃত্ব, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ঐক্য, দেশপ্রেম, সহমর্মিতা, সম্প্রীতিবোধ প্রভৃতি জাগ্রত হয়। সুতরাং শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রশ্ন-১১. পরিবর্তনশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পরিবর্তনশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিকীকরণে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবারের পরিবর্তনশীলতা সামাজিকীকরণের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। যেমন-যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় শিশুরা সহজেই অন্যের সাথে মানিয়ে চলার বিষয়টি আত্মস্থ করতে শেখে। পক্ষান্তরে, একক পরিবারের শিশুরা পিতা-মাতার ব্যস্ততার কারণে অনেকটা একা একা বেড়ে ওঠে। যা শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। সুতরাং পরিবারের গঠন ও কাঠামোগত পরিবর্তনশীলতা শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

প্রশ্ন-১২. খেলার সাথি কোন ধরনের সামাজিক গোষ্ঠী? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পরিবারের পর খেলার সাথি হলো দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক গোষ্ঠী। সঙ্গীদলের সাথে খেলতে গিয়ে শিশু যেমন অন্যদেরকে তার আচরণ দ্বারা প্রভাবিত করে, তেমনি অন্যের আচরণ দ্বারাও নিজে প্রভাবিত হয়। সঙ্গীদের সাথে মেলামেশার ফলে পরিবারের বাইরে যে একটি জগৎ আছে সে সম্পর্কে শিশু সচেতন হয়। পারিবারিক আবহে স্নেহ- যত্নের প্রাধান্য থাকলেও বহির্জগতের পরিবেশে শিশুকে সহনশীলতা, নিয়ম-শৃঙ্খলা, দায়িত্ব-কর্তব্য ইত্যাদি শিখতে হয়। এ সময়ে অনেক শিশুর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন-১৩. ছেলেমেয়েরা হঠকারী, আগ্রাসী ও অন্যের প্রতি বেপরোয়া মনোভাব সম্পন্ন হয় কেন?

উত্তর: পারিবারিক নিয়ন্ত্রণের অভাবে ছেলেমেয়েরা হঠকারী, আগ্রাসী ও অন্যের প্রতি বেপরোয়া মনোভাব সম্পন্ন হয়। অনেক পরিবারে দেখা যায়, বাবা-মা ছেলেমেয়েদের অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। তারা ছেলেমেয়েদের কোনো কাজে বাধা দেন না বা কোনো ব্যাপারে না করতে পারেন না। ছেলেমেয়েরা তাদের ইচ্ছামাফিক স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণের আশ্রয় নেয়। বাবা-মা যদি এসব ব্যাপারে উদাসীন থাকে বা নীরব থাকে তাহলে ছেলেমেয়ে হঠকারী হয়ে পড়ে, তারা আগ্রাসী হয় ও অন্যের প্রতি বেপরোয়া মনোভাব দেখায়।

প্রশ্ন-১৪. বিশ্বায়ন বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বিশ্বায়ন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব একীভূত হয়। বিশ্বায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সারা বিশ্বকে একই পতাকাতলে নিয়ে আসা হয়। মূলত তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিশ্বায়নের পথচলা। (১) তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ (২) আন্তর্জাতিক শ্রম বাজার এবং (৩) উৎপাদিত পণ্যের অবাধ প্রবাহ। সাধারণত সারাবিশ্বে এই তিনটি বিষয়ের অবাধ প্রচলন ও উপস্থিতি থাকলেই সেই প্রক্রিয়াকে বিশ্বায়ন বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে।

প্রশ্ন-১৫. সামাজিকীকরণে তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন উপাদান যেমন- ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট প্রতিনিয়ত ব্যক্তির সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষের জীবনে প্রতিটি বিষয় এখন তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। পরিবারের শিশুরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেদের বিকাশ ঘটায়। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশের কারণে বিজ্ঞাপন চিত্র, জনপ্রিয় সিনেমা, বিখ্যাত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের জীবনধারণ সম্পর্কিত তথ্য প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে যা শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে।

প্রশ্ন-১৬. ব্যক্তির সামাজিকীকরণ কীভাবে সম্পন্ন হয়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: একজন মানুষের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া তার সমগ্র জীবনব্যাপী অব্যাহত থাকে। শিশুর জন্মের পর হতে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন ও খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়াই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া। মানবশিশু জন্মের পর পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংস্পর্শে আসে, যা শিশুর সামাজিকীকরণকে প্রভাবিত করে। এরপর শিশু পরিবারের বাইরের পরিবেশ, যেমন- খেলার সাথি, পাড়া-প্রতিবেশী, বিদ্যালয় প্রভৃতি থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা ব্যক্তির সামাজিকীকরণে সহায়তা করে।

প্রশ্ন-১৭. ‘শিশুর সামাজিকীকরণে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ ভূমিকা পালন করে’— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: স্বাধীন সত্তা, মনোভাব ও মতামত প্রকাশের সুযোগদানের মাধ্যমে শিশুর সামাজিকীকরণে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান যেমন- ক্লাব, সমিতি, সংঘ ইত্যাদি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

এক সংঘের সাথে অন্য সংঘের প্রতিযোগিতা, ভালো করার চেষ্টা শিশুদেরকে আত্মপ্রত্যয়ী এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে থাকে। এসব সংঘ, সমিতি বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়, সেইসাথে পরিবর্তন ঘটে এর থেকে শিক্ষণীয় সামাজিকতার ধরনেও।

প্রশ্ন-১৮. অসুখী পরিবার শিশুর মানসিক বিকাশে অন্তরায় কেন?

উত্তর: যে পরিবারে পিতা-মাতার মধ্যে সর্বদা কলহ ও দ্বন্দ্ব লেগে থাকে সে পরিবারকে অসুখী পরিবার বলা যেতে পারে। অসুখী পরিবার শিশুর সুস্থ ব্যক্তিত্ব গঠনের পথে বিরাট অন্তরায়। কেননা শিশুরা পিতা-মাতার সাথে একাত্মতা বোধ করে পিতা-মাতার গুণাবলি নিজের মনে করে এবং সেগুলো নিজের মধ্যে প্রতিফলিত করে গর্বিত বোধ করে। আর একই কারণে সে পিতা-মাতার মধ্যকার কোনো দ্বন্দ্ব বা উত্তেজনা নিজের মধ্যে অনুভব করে। এর থেকে তার মনে অসহায় বোধ জন্ম নেয়, যা পরে উগ্র ও অসামাজিক আচরণের জন্ম দিতে পারে।


আশাকরি “সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া – সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন।

Leave a Comment