সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৯ম অধ্যায়: সামাজিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, ধর্মীয় ও নৈতিক ব্যবস্থা। প্রতিটি সমাজেই নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে। অন্যদিকে শিক্ষা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। আর ধর্ম একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান, মানবজীবনে যার প্রভাব ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী।
আবার মানুষের এক ধরনের বিশেষ ইতিবাচক অনুভূতি হলো নৈতিকতা। বর্তমান অধ্যায়ে সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সম্পত্তির ধারণা, সম্পত্তির বিবর্তন, রাষ্ট্রের উপাদান ও উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব, শিক্ষার উদ্দেশ্য, স্তর, ভূমিকা, কার্যাবলি, শিক্ষা সম্পর্কিত মতবাদ, ধর্মের উৎপত্তি, ভূমিকা এবং সমাজজীবনে নৈতিকতার প্রভাব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৯ম অধ্যায়
প্রশ্ন-১. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদনে যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলা হয়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে সম্পত্তির মালিকানা, উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, সঞ্চয়, লগ্নির বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনি প্রতিটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পেছনে থাকে এক বা একাধিক রাজনৈতিক দর্শন।
রাজনৈতিক দর্শনগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নীতিনির্ধারক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলি সে দেশের প্রতিষ্ঠানগত ও আইনগত কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হয়।
প্রশ্ন-২. ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ব্যক্তিবিশেষের ব্যবহার্য সম্পত্তি দুটি ভিন্ন বিষয়।’— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ব্যক্তিবিশেষের ব্যবহার্য সম্পত্তি বিষয় দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে সাধারণত উৎপাদন কাজে অথবা বাড়তি আয়ের কাজে ব্যবহার বা লগ্নি করা যায় এমন সম্পত্তিকে বোঝায়। এ ধরনের সম্পত্তির ওপর ব্যক্তির সর্বোচ্চ ভোগাধিকার ক্ষমতা থাকে যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত বা অনুমোদিত।
পক্ষান্তরে, ব্যক্তি বিশেষের সম্পত্তি বলতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যবহার্য দ্রব্যকে বোঝায়। যেমন-ব্যক্তির পোশাক, কলম, ঘড়ি, চশমা ইত্যাদি। এ সকল দ্রব্য বাড়তি উৎপাদন বা আয়ে তেমন ভূমিকা পালন করে না।
প্রশ্ন-৩. ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে ‘স্বাধীন উদ্যোগের অর্থনীতি’ বলা হয় কেন?
উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি মূল প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে অবাধে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন ও সেবাকার্য চালায় বলে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে স্বাধীন উদ্যোগের অর্থনীতি বলা হয়। এ অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা ও ভোক্তার পূর্ণ স্বাধীনতা বজায় থাকে এবং ভোগকারীর ইচ্ছা ও রুচি অনুযায়ী উৎপাদন করা হয়।
ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অবাধে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হয়। এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে না, বরং একটি স্বয়ংক্রিয় মূল্যব্যবস্থার মাধ্যমেই সবকিছু নির্ধারিত হয়। এ জন্য ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে ‘স্বাধীন উদ্যোগের অর্থনীতি’ও বলা হয়।
প্রশ্ন-৪. আদিম সমাজে ভূমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা অনুপস্থিত ছিল কেন?
উত্তর: কৃষি আবিষ্কারের অনুপস্থিতিই ছিল আদিম সমাজে ভূমিতে ব্যক্তিমালিকানার অনুপস্থিতির কারণ— মার্কসীয় সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আদিম সমাজে সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। কারণ আদিম সমাজ ছিল শ্রেণিহীন ও শোষাণহীন। মানুষে মানুষে সহযোগিতা বর্তমান ছিল এবং সংহতি ও সম্পৃক্তবোধ ছিল সুদৃঢ়।
আদিম সমাজে সম্পত্তিতে ব্যক্তিমালাকানা ছিল না, কারণ তখনো কৃষি আবিষ্কার হয়নি। মার্কসীয় সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে এটিই ছিল আদিম সমাজে সম্পত্তির ব্যক্তিমালিকানার অনুপস্থিতির কারণ।
প্রশ্ন-৫. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলতে এমন অর্থব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীনে অর্থনৈতিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রিত। অন্যভাবে বলা যায়, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণের ওপর কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না। রাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদ এবং উৎপাদনের উপকরণের ওপর সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন: চীন, রাশিয়া প্রভৃতি।
প্রশ্ন–৬. পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ব্যক্তিমালিকানা কেন্দ্রিক অর্থব্যবস্থাকে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বলে। পুঁজিবাদী অর্থনীতি এমন একটি অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণগুলোর ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে এবং সমাজের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেসরকারি পর্যায়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংঘটিত হয়।
অতএব, যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পদের ওপর ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠিত, অর্থনৈতিক কার্যক্রম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত এবং উৎপাদনের উপকরণ ও দ্রব্যের বাজারে প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকে তাকে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলা হয়।
প্রশ্ন-৭. ‘শক্তি নয়, ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভিত্তি’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: শক্তি প্রয়োগ নয়, বরং ইচ্ছাই হচ্ছে রাষ্ট্রের ভিত্তি। কেননা শক্তিই যদি রাষ্ট্রের ভিত্তি হতো তাহলে বৃহৎ শক্তিশালী রাষ্ট্রের পাশে ছোট রাষ্ট্রসমূহ টিকে থাকতে পারতো না। শক্তিপ্রয়োগ কেবল অশান্তিই সৃষ্টি করতে পারে, কোনো মহৎ কাজ করতে পারে না।
রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা ও বৈদেশিক আক্রমণ হতে রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্যে সামরিক শক্তির প্রয়োজন অপরিহার্য। কিন্তু তাই বলে পাশবিক শক্তি দিয়ে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা যায় না। এ জন্যে প্রয়োজন জনগণের আগ্রহ, সম্প্রীতি ও দেশপ্রেম। অতি প্রাচীনকাল থেকেই তাই সর্বত্র জনগণের ইচ্ছাই প্রাধান্য পেয়ে আসছে, শক্তি নয়।
প্রশ্ন-৮. জন লক বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্য তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জন লকের প্রকৃতির রাজ্য তত্ত্বের মূল বক্তব্য প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষ স্বাধীনভাবে অধিকার ভোগ করতে পারত। প্রকৃতির রাজ্যে জনগণ প্রকৃতির আইন মেনে চলত এবং সবাই মিলেমিশে শান্তিতে ও সুখে বসবাস করত। কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক অবস্থার মধ্যে মানুষ নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়।
তাদের মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যাখ্যা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক নিয়ম অমান্যকারীকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে সর্বত্রই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আর এটিই হলো জনলকের প্রকৃতির রাজ্য তত্ত্ব।
প্রশ্ন-৯. সার্বভৌমত্ব কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের চরম ও চূড়ান্ত ক্ষমতা। বস্তুত রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো সার্বভৌমত্ব। এর দুটি দিক রয়েছে। যথা- ১. অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা ও ২. বাহ্যিক ক্ষমতা। অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র তার মধ্যস্থিত সব ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর খবরদারি করে এবং আদেশ-নিষেধ জারি করে। আর বাহ্যিক চরম ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে।
প্রশ্ন-১০. রাষ্ট্রের বিবর্তনে ধর্মের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রাষ্ট্রের বিবর্তনে ধর্মের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবার বর্ধিত হওয়ার ধারায় যখন বৃহত্তর সমাজের সৃষ্টি হয়, তখন আত্মীয়তার বন্ধন দুর্বল হতে থাকে এবং ধর্মীয় বন্ধন গুরুত্ব পেতে থাকে। ধর্ম তখন সামাজিক সংগঠনের ভিত্তিতে পরিণত হয়। এছাড়া মানুষের আচার-আচরণও ধর্মীয় বিধি-নিষেধ দ্বারা প্রভাবিত হয়। ধর্মীয় নেতাই তখন সমাজের নেতা হিসেবে গণ্য হন। রাজা তখন হন পুরোহিত রাজা। তার নির্দেশই ধর্মীয় নির্দেশ হিসেবে পালিত হয়। এভাবেই ধর্ম রাষ্ট্রের বিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন-১১. রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত সঠিক মতবাদ কোনটি? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত মতবাদগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য মতবাদ। বিবর্তনমূলক মতবাদে রাষ্ট্র উৎপত্তির সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদের মূলকথা হচ্ছে, কোনো একক কারণে রাষ্ট্রের জন্ম হয় নি।
রক্তের সম্পর্ক, ধর্মের বন্ধন, যুদ্ধবিগ্রহ, অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও রাজনৈতিক চেতনার সংমিশ্রণে রাষ্ট্র নামক এ সামাজিক সংগঠনটির জন্ম হয়েছে। অধ্যাপক গার্নার, বার্জেসসহ অধিকাংশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এ মতবাদকে রাষ্ট্রের উৎপত্তির সঠিক মতবাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদই প্রকৃত এবং বৈজ্ঞানিক মতবাদ।
প্রশ্ন-১২. সামাজিক চুক্তি মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয় কীভাবে?
উত্তর: সামাজিক চুক্তি মতবাদ অনুসারে জনসাধারণের মধ্যকার চুক্তি, আইনসম্মত চুক্তিপত্র অথবা মতৈক্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। সামাজিক চুক্তি মতবাদটি কোনো রাষ্ট্রের উৎপত্তি এবং প্রকৃতিকেই ব্যাখ্যা করে না, সেইসাথে রাষ্ট্রের ন্যায্যতাও প্রমাণ করে।
দার্শনিক হবস, লক, রুশো তিনজনই রাষ্ট্রের উৎপত্তি বিষয়ে তাদের আলোচনা শুরু করেছিলেন ‘প্রকৃতির রাজ্য’ দিয়ে। তাদের মতানুসারে রাষ্ট্র জন্মের পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত, কিন্তু প্রকৃতির রাজ্যের অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না এবং মানুষ তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যই চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে।
প্রশ্ন-১৩. রাষ্ট্র সৃষ্টি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক মতবাদ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐশ্বরিক/বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদ বলতে বোঝায় রাষ্ট্র বিধাতার সৃষ্টি, রাজা বিধাতার প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র শাসন করেন। ঐশ্বরিক মতবাদে রাজার আদেশ পালন করার অর্থ বিধাতার নির্দেশ মেনে চলা। রাজার আদেশ নির্দেশ অমান্য করা গর্হিত কাজ।
এ মতবাদ অনুযায়ী শাসক তার কাজের জন্যে জনসাধারণের নিকট দায়ী নয় বরং বিধাতার নিকট দায়ী। ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে তিনি জনসাধারণের ওপর চরম ক্ষমতার অধিকারী। এ মতবাদের মূলকথা হলো বিধাতা রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন এবং রাজা তার প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র শাসন করেন।
প্রশ্ন-১৪. শিক্ষা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শিক্ষা বলতে, কোনো বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা বা জ্ঞাত হওয়াকে বোঝায়। শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তির আচরণে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটে। অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মাধ্যমে এই পরিবর্তন ঘটে যা ব্যক্তি ও সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য, কল্যাণকর ও অপেক্ষাকৃত স্থায়ী। শিক্ষা একটি ধারাবাহিক ও পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়াও বটে।
প্রশ্ন-১৫. কর্তৃত্ব বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক্ষমতার প্রত্যাশিত ও বৈধ প্রভুত্বকারিকে কর্তৃত্ব বলে। এখানে প্রত্যাশিত কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে নীতি বা রাজনৈতিক ফর্মূলা অনুযায়ী কর্তৃত্ব যার বা যাদের উপর ন্যস্ত করা উচিত এই অর্থে। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার কর্তৃত্বের সংজ্ঞা প্রদানে, বলেন, ‘কর্তৃত্ব প্রায়শই ক্ষমতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়, যে ক্ষমতা অন্যকে মেনে চলতে বাধ্য করে। তবে কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রয়োগই শেষ কথা নয়, বরং ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার যখন স্বীকৃতি লাভ করে তখনই প্রকৃত কর্তৃত্বের উদ্ভব সম্ভব হয়।
প্রশ্ন-১৬. ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক কীরূপ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সাধারণত ক্ষমতা হলো অধস্তনদের দিয়ে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য। পক্ষান্তরে, কর্তৃত্ব হলো সেই কাজটি করিয়ে নেওয়ার আইনগত অধিকার। কর্তৃত্বও একপ্রকার ক্ষমতা। তবে এ ক্ষমতার সাথে বৈধতা বিষয়টি জড়িত থাকে। অর্থাৎ ক্ষমতা যখন সমাজে স্বীকৃত ও বৈধ হিসেবে বিবেচিত হয় তখন তা কর্তৃত্বে পরিণত হয়।
প্রশ্ন-১৭. আত্মার ধারণাকে সর্বপ্রাণবাদের মূল কথা বলা হয় কেন?
উত্তর: আত্মার ধারণা সর্বজনীন এবং এটি হচ্ছে জীবনীশক্তি। এ কারণে একে সর্বপ্রাণবাদের মূলকথা বলা হয়। আত্মার উপস্থিতি দেহকে সচল করে, অনুপস্থিতিতে দেহ হয়ে পড়ে নিশ্চল। আত্মা অশরীরী অবস্থায় যথেচ্ছা বিচরণ করতে পারে এবং মৃত্যুর পর দেহ থেকে আত্মার চিরবিচ্ছেদ ঘটে।
দেহ মৃত্যুর পর বিনষ্ট হয়, কিন্তু আত্মা দেহ থেকে মুক্ত হয়ে প্রেতাত্মারূপে বিরাজ করে মানুষের মাঝে মঙ্গল ও অমঙ্গল সাধন করে। আত্মার পুনরুত্থানে বিশ্বাসই হচ্ছে সর্বপ্রাণবাদ। সেজন্য এ মতবাদকে আত্মাবাদও বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন-১৮. ‘ধর্ম মানসিক শান্তি প্রদান করে।’- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ধর্ম দুঃখ-কষ্টকে সহনীয় মাত্রায় রাখার মাধ্যমে মানুষকে শান্তি প্রদান করে। মানুষ পৃথিবীতে আশা ও সাফল্যের দোলাচলে প্রায়শই হতাশা ও বঞ্চনার শিকার হয়। সে যেসব জিনিস পাওয়ার প্রত্যাশা করে তা অনেক সময় তার ভাগ্যে জোটে না।
এভাবে যখন আশা-আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকে তখন মানুষ সান্ত্বনা লাভের জন্য ধর্মের শরণাপন্ন হয়। গভীর ধর্মীয় অনুভূতির প্রভাবে সে দুর্ভাগ্যকে বরণ করে নেয়। আর এভাবেই মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের বলে দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার প্রয়াস পায়। এ কারণেই বলা হয় যে, ধর্ম মানুষকে মানসিক শান্তি প্রদান করে।
প্রশ্ন-১৯. নৈতিকতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম অনুভূতি। নৈতিকতা হলো ভালো ও মন্দের মধ্যকার ইচ্ছা, সিদ্ধান্ত ও কর্মগত বিভাজন। নির্দিষ্ট দর্শন, ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুযায়ী নৈতিক বিধানই নৈতিক ব্যবস্থা। সাধারণ অর্থে নৈতিকতা বলতে বোঝায়, কোনো নির্দিষ্ট জনগণ বা সংস্কৃতির মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল কোনো কিছুর সত্যিকার ভালো বা মন্দের অবস্থা। যার মধ্যে নৈতিকতা নামক গুণ রয়েছে সে বা তারা ভালো এবং মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে।
আশাকরি “সামাজিক ব্যবস্থা – সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৯ম অধ্যায়” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন।