স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে বিতর্ক প্রতিযোগিতার পক্ষ দলের বক্তব্য আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয়। আপনি যদি “স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে” বিতর্ক টি খুজে থাকেন এবং ‘স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো’ হবে বিতর্ক প্রতিযোগিতার পক্ষ দলের বক্তা হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য।
‘স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে’ বিতর্ক প্রতিযোগিতার পক্ষ দলের ৩ জন বক্তার বক্তব্য আজকের আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেক বক্তা চার (৪) মিনিট করে সময় পাবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে পক্ষ দলের বক্তব্য
পক্ষে বক্তা বক্তা-১: স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু- আলাইকুম। ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে।’ আমি এবং আমার দল এ বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান করছি। এই বিষয়টির পক্ষে আমি আমার যুক্তিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
মাননীয় মডারেটর, বাড়ির কাজ প্রতিটি শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । বাড়ির কাজ ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করার প্রয়াস খুজে পাওয়া যাবে না। একজন শিক্ষার্থী স্কুলে মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় ব্যায় করে। আর এ সংক্ষিপ্ত সময়ে তার পাঠ্য সমস্ত বিষয় ভালোভাবে আয়ত্ত করা প্রায় অসম্ভব। অথচ শিক্ষার্থীরা দিনের একটি বড় সময় বাসায় অবস্থান করে। তাই তারা পড়াশোনার জন্য দীর্ঘ সময়ও পায়। আর এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে একজন শিক্ষার্থী গভীরভাবে অধ্যায়ন করতে পারে।
অপরদিকে, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী একটি শ্রেণিকক্ষে ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী থাকে। জরিপ বলছে, বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ : ৬০। অর্থাৎ একটি শ্রেণিকক্ষে প্রতি ৬০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক নিযুক্ত থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এত বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থীর সবাইকে ভালোভাবে বোঝানো একজন শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর তাই শিক্ষার্থীরা বাড়িতে পড়ার কাজ পেলে তারা তাদের অভিভাবকের সাহায্য নিয়ে পড়া তৈরি করতে পারে। যা তাদের ভালো ফলাফল অর্জনে সাহায্য করে।
তাই সবশেষে আমি বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের বাড়িতে করার জন্য বেশি বেশি করে পড়া দেওয়া উচিত। এতে করে তারা পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকবে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনে সক্ষম হবে।
পক্ষে বক্তা বক্তা-২: স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু আলাইকুম। পক্ষ দলের দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে।’ ইতোমধ্যেই আমার দলের প্রথম বক্তা বিষয়টির পক্ষে তার জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছে। আমি আরো কিছু গ্রহণযোগ্য যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে বিষয়টির পক্ষ সমর্থন করছি।
বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু বলে গেলেন, বাড়ির কাজে নাকি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। আনন্দ দেয় না। কিন্তু তারা এটা জানেনই না যে, যে সকল পাঠ্য তারা আনন্দের সাথে পড়বে বা শিক্ষার্থী বিবেচনা করে সেই পাঠ্যগুলোই বাড়ির কাজ হিসেবে দেওয়া হয়। যেমন- দীর্ঘ ছুটির দিনে তারা কোন বই পড়বে, অথবা যারা যে সাবজেক্টে দুর্বল তাদের সেই সাবজেক্ট প্রাকটিস করতে বলা হয়। ফলে তারা বই পড়তে উৎসাহ পাবে এবং তাদের ফলাফলও অনেক ভালো হবে।
একজন শিক্ষার্থীকে যদি বাড়িতে কোনো কাজই না দেওয়া হয়, তাহলে স্কুলের পড়াটুকুই তার শেষ পড়া হবে। সে আর বাড়িতে বসে বই খুলে দেখবে না। আর শিক্ষার্থী যদি বাড়িতে বসে পড়া অনুশীলনই না করে, তাহলে সে পরেরদিন স্কুলে গিয়ে কী পড়া দেবে?
মাননীয় মডারেটর, আমরা জানি পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে প্রচুর পরিমাণে পড়ে । তো বাড়িতে যদি শিক্ষার্থীদের পড়া না-ই হয়ে থাকে তাহলে তো শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র স্কুলের পড়া পড়েই পরীক্ষার হলে যেত। তাদের বাড়িতে বসে আর পড়া লাগতো না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা সত্য না। স্কুলের পড়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, একইভাবে বাড়িতে বসে পড়াও কম গুরুত্বপূর্ণ না। তাই আমরা বলতেই পারি পরিকল্পিত হোমওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের আনন্দের সহিত পড়ালেখায় উৎসাহিত করে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনে সাহায্য করে।
পক্ষে বক্তা বক্তা-৩: স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু- আলাইকুম। পক্ষ দলের তৃতীয় বক্তা হিসেবে আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে।’ ইতোমধ্যেই আমার দলের দু’জন বক্তা বিষয়টির পক্ষে তার জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছে। আমি আরো কিছু গ্রহণযোগ্য যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে বিষয়টির পক্ষ সমর্থন করছি।
মাননীয় মডারেটর, প্রতিপক্ষ বন্ধুরা বলে গেলো হোমওয়ার্ক নিয়ে অমর্ত্য সেনের মতামত। কিন্তু তারা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. লক্ষ্মীনাথ বায় এবং Keith And Benso এর বক্তব্য এড়িয়ে গেছেন। ১৯৯২ সালে একটি জাতীয় গবেষণায় পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে গবেষণা করতে গিয়ে তারা দেখেন যে, অন্যান্য জনগোষ্ঠীর চেয়ে এশিয়া-আমেরিকার শিক্ষার্থীদের ওপর হোমওয়ার্ক সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ এশিয়া-আমেরিকার শিক্ষার্থীরা হোমওয়ার্কের মাধ্যমে বেশি উপকৃত হয়।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা হোমওয়ার্কের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে অন্যান্যা শিক্ষাগুলো ভালোমতো পেয়ে থাকে। যেমন- পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়ানুবর্তিতা, দায়িত্ববোধ, পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তোলা ইত্যাদি।
তাই বলা যায়, হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো ফলাফলই আনতে সক্ষম করে না, বরং আদর্শ মানুষ হিসেবেও গড়ে উঠতে সাহায্য করে। সবশেষে আমি বলতে চাই, স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে—এ বিষয়টির পক্ষে আমি এবং আমার দল গ্রহণযোগ্য যুক্তিগুলো ধরতে সক্ষম হয়েছি। যা প্রমাণ করে পক্ষ দলই বিজয়ী হওয়ার যোগ্য।
সোর্স: কোর্সটিকা
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।