HSC অর্থনীতি ১ম পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

অর্থনীতি ১ম পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষের জীবনে অভাব অসীম। কিন্তু অভাব পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সীমিত বা অপ্রতুল। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ সবসময় খাদ্য, বস্তু, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতি নানা রকম দ্রব্য ও সেবার অভাব অনুভব করে। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ একটি অভাব পূরণ করলে তার সামনে একের পর এক নতুন অভাব এসে হাজির হয়। ফলে সম্পদ স্বল্পতার কারণে অভাবের সাথে এ যুদ্ধ মানুষের একটি জীবনব্যাপী ঘটনা।

দ্রব্য ও সেবা ভোগের মাধ্যমে অভাব পূরণ এবং তৃপ্তি লাভ করাই হলো মানুষের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু সীমাহীন অভাব পূরণের জন্য যে পরিমাণ সম্পদের প্রয়োজন তা সব সময়ই অভাবের তুলনায় কম। ভাই মানবজীবনে যেমন সীমাহীন অভাব রয়েছে, তেমনি রয়েছে সীমিত সম্পদ।


HSC অর্থনীতি ১ম পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

১. “নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা থেকে কোন ক্ষেত্রে উন্নত।

উত্তর: ভোক্তার স্বাধীনতা, সামাজিক নিরাপত্তা ও সুষম উন্নয়ন সাধনের দিক থেকে নির্দেশনামূলক অর্থব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা থেকে উন্নত। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মূলধনের প্রাধান্য, মুনাফার উদ্দেশ্যে উৎপাদন, উৎপাদনের উৎপাদনসমূহের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে।

আর নির্দেশমূলক উৎপাদনের যাবতীয় উপাদানের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় থাকে। ধনতান্ত্রিক অর্থব‍্যবস্থায় শ্রমিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন কাজ রাষ্ট্রের উদ্যোগে পরিচালিত হয় বলে শ্রমিক শোষণের সুযোগ থাকে না। আর এসব দিক বিবেচনা করে বলা যায় যে, ধনতান্ত্রিক অথ্যবস্থার তুলনায় নির্দেশনামূলক অর্থব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত।

২. অভাব পূরণে নির্বাচন সমস্যা দেখা দেয় কেন?

উত্তর: মানুষের জীবনে অফুরন্ত অভাবের তুলনায় অভাব পূরণের সম্পদ সীমিত বলে অভাব পূরণে নির্বাচন সমস্যা দেখা দেয়। মানুষের অভাব অসীম। তাই সব অভাব একসাথে পূরণ করা যায় না। এজন্য ভোক্তা তার অনেক অভাবের মধ্যে প্রয়োজনীয় অভাবগুলো নির্বাচন করে সীমিত সম্পদ দ্বারা আগে অভাব পূরণ করার চেষ্টা করে। আর এ কারণেই নির্বাচন সমস্যা দেখা দেয়।

৩. “সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতাই অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ হলো সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা। ব্যক্তি অথবা রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদ অপ্রচুর। অসীম অভাবের সাথে সাথে যদি সম্পদও ইচ্ছামতো ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেত, তবে অর্থনৈতিকভাবে সমস্যার সৃষ্টি হতো না। সুতরাং সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতাই অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ।

৪. কোন অর্থব্যবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকে না?

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকে না। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং সরকারি হস্তক্ষেপ ব্যতীত দাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত এক ধরনের অর্থব্যবস্থা।

এই অর্থব্যবস্থার উৎপাদন, বণ্টন, বিনিয়োগ ও ভোগসহ সমাজের সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যক্তিগত, উদ্যোগে পরিচালিত হয়। উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয় করে। ভোগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তি পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। তাই এ অর্থব্যবস্থায় সরকারের কোনো ভূমিকা থাকে না।

৫. ‘দুষ্প্রাপ্যতা ও নির্বাচন’ কীভাবে সম্পর্কিত?

উত্তর: দুষ্প্রাপ্যতা ও নির্বাচন ধারণাটি অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের অভাব অসীম এবং অভাব পূরণের সম্পদ দুষ্প্রাপ্য। এই দুষ্প্রাপ্য সম্পদ দ্বারা সকল অভাব একসাথে পূরণ করা যায় না। আবার মানুষের জীবনে সকল অভাবের গুরুত্ব একই রকম নয়। এজন্যই মানুষকে একাধিক অভাবের মধ্য থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ অভাব নির্বাচন করতে হয়। আর এভাবে দুষ্প্রাপ্যতা ও নির্বাচন পরস্পর সম্পর্কিত।

৬. নির্বাচন সমস্যা উদ্ভবের কারণ কী?

উত্তর: নির্বাচন সমস্যা উদ্ভবের মূল কারণ হলো সম্পদের স্বল্পতা। মানুষের অভাব অসীম। অভাব মোচনের উপাদানসমূহ একদিকে যেমন সীমিত অন্যদিকে তেমনি এসব উপাদানকে বিকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য অভাব পূরণ করা যায়। মানুষ অপেক্ষাকৃত কম জরুরি অভাব ত্যাগ করে অধিকতর জরুরি অভাব পূরণ করবে যা হতে সে সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করতে পারে। এ থেকেই নির্বাচন সমস্যার উদ্ভব।

৭. ব্যষ্টিক অর্থনীতিকে কি সামষ্টিক অর্থনীতি থেকে পৃথক করা যায়?

উত্তর: না ব্যষ্টিক অর্থনীতিকে সামষ্টিক অর্থনীতি থেকে পৃথক করা যায় না। বর্তমানকালে অর্থনীতির আওতা অনেক প্রসারিত। অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য ও বাস্তব ধারণাকে উপলব্ধি করায় ১৯৩৩ সালে অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক র‍্যাগনার ফ্রিশ অর্থনীতিকে দুই ভগে ভোগ করেন। যথা: ১. ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও ২. সামষ্টিক অর্থনীতি।

ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে প্রত্যেকটির বিশেষ অংশের পৃথক আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকে। পক্ষান্তরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনীতির প্রত্যেকটির সামগ্রিক বিষয় আলোচনার অন্তর্ভুক্ত থাকে। সুতরাং বলা যায়, ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

৮. উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার ওপর কোন বিন্দুগুলো অধিক কাম্য বিন্দু?

উত্তর: উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা বরাবর বিন্দুগুলো অধিক কাম্য বিন্দু। উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা হলো এমন একটি রেখা যে রেখার বিভিন্ন বিন্দুতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ ও চলতি প্রযুক্তি সাপেক্ষে দুটি উৎপন্ন দ্রব্যের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য বিভিন্ন সংমিশ্রণ প্রকাশ পায়।

এ রেখার নিচের বিন্দুতে উৎপাদন করলে সম্পদের অদক্ষতা প্রকাশ পায়। বৃহৎ সম্পদ অব্যবহৃত থাকে এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার বাইরে উৎপাদন করা সম্ভব নয়। সুতরাং উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা বরাবর বিন্দুগুলো অধিক কাম্য বিন্দু।

৯. সুযোগ ব্যয়ের উদ্ভব ঘটে কেন?

উত্তর: সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা ও নির্বাচন অভাব থেকে সুযোগ ব্যয় ধারণাটির উদ্ভব ঘটে। সুযোগ ব্যয় দুটি পণ্যের পারস্পরিক বিনিময় সম্পর্ক দ্বারা স্থাপিত হয়। একটির উৎপাদন বাড়লে অন্যটির উৎপাদন কমাতে হয়। এক্ষেত্রে সম্পদের স্বল্পতার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ অভাবটি আগে পূরণ করা হয়। অন্যদিকে কম গুরুত্বপূর্ণ অভাবের ত্যাগ স্বীকার করে নিতে হয়।

১০. ‘সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি করে’- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদের মালিকানা ব্যক্তিগত হওয়ায় সমাজে শ্রেণিবৈষম্যের সৃষ্টি হয়। ধনতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিপ্ত মালিকানাকে স্বীকার করে নেওয়ায় সেখানে সকলের সম্পদের পরিমাণ সমান হয় না। ব্যক্তিগত সম্পদ ও সম্পত্তি অর্জনের ভিত্তিতে সমাজে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণির উদ্ভব হয়।

পুঁজিবাদের কারণে সৃষ্ট ও শ্রেণিবিভাজনের ফলে সমাজে বিভিন্ন বৈষম্য তৈরি হয়। যেমন- উচ্চবিত্তের সন্তানেরা উন্নত শিক্ষালাভের সুযোগ পায় আর হতদরিদ্ররা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।

১১. “ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তার সার্বভৌমত্ব”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তার স্বাধীনতা স্বীকৃতি। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের সকল উপকরণের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বিদ্যমান এবং ভোগের ক্ষেত্রেও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করে। “ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তা সম্রাট” অর্থাৎ রাষ্ট্র বা সরকার ভোক্তার পছন্দকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করবে না। ভোক্তার চাহিদার মধ্যে বৈচিত্র্য থাকলে উৎপাদন ক্ষেত্রেও তার প্রতিফলন ঘটে। উৎপাদনকারী ভোক্তাদের স্বাধীন চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের উৎপাদন পরিচালনা করে।

১২. অর্থনীতিতে সকল অভাব এক সাথে পূরণ করা হয় না কেন?

উত্তর: সম্পদের স্বল্পতার কারণে অর্থনীতিতে সকল অভাব একসাথে পূরণ করা হয় না। অর্থনীতিতে সকল অভাব একসাথে পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষের চাহিদা ও অভাববোধ হলো সীমাহীন। এ সীমাহীন অভাব পূরণ করার উপকরণ সীমিত।

ফলে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সীমাবদ্ধ সম্পদ দ্বারা সকল অভাব একসাথে পূরণ করা যায় না। ফলে মানুষকে ওই সকল অভাব আগে পূরণ করতে হয় যে সকল অভাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ সে তার অভাবগুলোকে গুরুত্বের ক্রমানুসারে সাজায় এবং অতি জরুরি অভাবগুলো আগে পূরণ করে।

১৩. উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: প্রাপ্ত সীমিত সম্পদ দ্বারা উৎপাদন করা যায় এমন সব দ্রব্যের সম্ভাব্য সংমিশ্রণ যে রেখার দ্বারা নির্দেশ করে তাকে উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা বলা হয়। সীমিত সম্পদ দ্বারা কোনো একটি দ্রব্যের বেশি পরিমাণ উৎপাদন করলে অন্য দ্রব্যের উৎপাদন কিছুটা হ্রাস করতে হয় অথবা একটি মাত্র দ্রব্য উৎপাদন করলে অন্যকোনো দ্রব্য উৎপাদন করা যায় না। অর্থাৎ সীমিত সম্পদ দ্বারা দুটি দ্রব্যের যে সম্ভাব্য সংমিশ্রণ উৎপাদন করা সম্ভব তাই উৎপাদন নির্দেশ করে।

১৪. নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার গুরুত্ব নেই কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় পণ্যের দাম কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হয় বিধায় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার গুরুত্ব নেই। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার গুরুত্ব নেই। কারণ নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দ্বারা দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয় না বরং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে।

অন্যদিকে কিন্তু ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দ্বারা বাজারদাম নির্ধারিত হয়। এছাড়া বাজার চাহিদা ও বাজার যোগান পণ্য ও সেবার দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার গুরুত্ব নেই।

১৫. ‘কী উৎপাদন করা হবে’- এটি কী ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা?

উত্তর: “কী উৎপাদন করতে হবে” এটি মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা। প্রত্যেক সমাজের প্রথম মৌলিক সমস্যা কী উৎপাদন করতে হবে এবং কতটুকু উৎপাদন করতে হবে তা নির্ধারণ করা। সম্পদের স্বল্পতার কারণেই এ সমস্যার উদ্ভব হয়। প্রয়োজন বা গুরুত্বের ভিত্তিতে প্রথমে স্থির করতে হবে কী কী দ্রব্যের উৎপাদন প্রয়োজন এবং তারপর উৎপন্ন দ্রব্যের পরিমাণ নির্ধারণ করা।

১৬. ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। অর্থনীতির প্রত্যেকটির বিশেষ অংশের পৃথক আলোচনা ব্যষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত।

পক্ষান্তরে, সামগ্রিক ক্রিয়া সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একজন ভোগকারী কত দামে কী কী দ্রব্য কতটুকু ক্রয় করলে সর্বোচ্চ তৃপ্তি লাভ করবে তা আলোচনা করা হয়। পক্ষান্তরে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে দেশের সকল লোক কী কী দ্রব্য কী পরিমাণে ভোগ করলে সর্বোচ্চ সামাজিক কল্যাণ সাধিত হবে তা আলোচনা করা হয়।

১৭. দাম প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বাজার ব্যবস্থায় যে অদৃশ্য হাত ব্যক্তির অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে দ্রব্যের দাম নির্ধারণ করে তাকে দাম প্রক্রিয়া বলে। দাম প্রক্রিয়া একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। এ স্বয়ংক্রিয় দাম প্রক্রিয়া উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

অ্যাডাম স্মিথ-এর মতে, “ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে যে অদৃশ্য শক্তি বিভিন্ন ব্যক্তির কর্মপ্রচেষ্টাকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে তা হলো দাম প্রক্রিয়া।” অধ্যাপক বেনহাম-এর মতে, “দাম প্রক্রিয়া উৎপাদনকারীর মুনাফা অর্জনের ইচ্ছা ও ভোগকারীর সর্বাপেক্ষা অধিকসংখ্যক অভাব পূরণ করার ইচ্ছার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।” দাম ব্যবস্থা প্রতিযোগিতার বাজারের চাহিদা ও যোগান দ্বারা নির্ধারিত হয়।

১৮. দুষ্প্রাপ্যতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: সম্পদের অপ্রতুলতাকে দুষ্প্রাপ্যতা বলে। মানবজীবনে অভাবের তুলনায় সম্পদ সীমিত। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য সম্পদের এ ঘাটতি বা অপ্রতুলতাকেই বলা হয় দুষ্প্রাপ্যতা। মানুষের অভাব পূরণের জন্য যে পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজন, সে পরিমাণ সম্পদের যোগান প্রকৃতিতে নেই কিংবা প্রকৃতিতে সম্পদের যোগান থাকলেও তা মানুষের নাগালের বাইরে থাকে। প্রয়োজনীয় সম্পদের এ অভাবকেই অর্থনীতিতে দুষ্প্রাপ্যতা বলে অভিহিত করা হয়।

১৯. মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: যে অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ ও নিয়ন্ত্রণ বিরাজ কুরে তাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলে। মিশ্র ব্যবস্থায় ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়।

এরূপ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা অবাধ না হয়ে আংশিকভাবে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। তাছাড়া কিছু কিছু বৃহৎ ও মৌলিক শিল্পকারখানা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় বাণিজ্য সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। অনেকে মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে একটি উন্নত অর্থব্যবস্থা বলে মনে করেন।

২০. নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: যে অর্থব্যবস্থায় সমাজের অধিকাংশ সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা বা সরকারি মালিকানা থাকে তাকে নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা বলে। বিশ্বে সর্বপ্রথম লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় নির্দেশমূলক তথা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার উত্থান হয়। মার্কসীয় দর্শন নির্দেশমূলক তথা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল ভিত্তি। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় সকল সম্পদ পরিকল্পিতভাবে ব্যবহৃত হয়। এজন্য এ ব্যবস্থাকে পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থাও বলে।

২১. ইসলামি অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ইসলামি অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- এ অর্থব্যবস্থায় বৈষয়িক উন্নতির সাথে নৈতিক উন্নতির সমন্বয় সাধন করা হয়। ইসলামি অর্থব্যবস্থা কুরআন ও হাদিসভিত্তিক। এ অর্থব্যবস্থায় শ্রমকে উচ্চমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষ নিজেকে স্রষ্টার আমানতদার হিসেবে গণ্য করে। এ অর্থব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয়। এছাড়া এ অর্থব্যবস্থায় সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২২. সামষ্টিক অর্থনীতি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: অর্থনীতির যে শাখায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম সমষ্টিগত বা সামগ্রিকভাবে আলোচনা করা হয় তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে। সামষ্টিক-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো MACRO। ইংরেজি ‘Macro’, শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Makros’ থেকে এসেছে যার অর্থ বৃহৎ।

অর্থনৈতিক ঘটনাকে সামগ্রিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্লেষণ করাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে খণ্ড খণ্ডভাবে ব্যাখ্যা না করে সামগ্রিকভাবে ব্যাখ্যা করলে তাকে, সামষ্টিক অর্থনীতি বলে। যেমন: জাতীয় আয়, জাতীয় উৎপাদন, সামগ্রিক ভোগ, সামগ্রিক চাহিদা ও যোগান ইত্যাদির আলোচনা করা হয় এ অর্থনীতিতে।

২৩. অভাবের ধারণাটি ব‍্যাখ্যা কর।

উত্তর: কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে অভাব বলা হয়। অভাব মানব জীবনের অর্থনৈতিক সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে ভলোভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ যেসব বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্যসামগ্রীর প্রয়োজন। অনুভব করে তাই হলো অভাব। তবে অর্থনীতিতে নিছক পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অভাব বলে গণ্য হয় না। বরং জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজন আছে অথচ হাতের কাছে নেই এমন দ্রব্য ও সেবা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে অভাব বলা হয়। যেমন- একজন ভিক্ষুক একটি মোটরগাড়ি কেনার আকাঙ্ক্ষা করলে তাকে অভাব বলা যাবে না। কিন্তু একজন ডাক্তার কিংবা একজন ব্যবসায়ী তা কেনার ইচ্ছা পোষণ করলে তাকে অভাব বলা যাবে।

২৪. ভোগ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের সর্বশেষ পর্যায় হলো ভোগ। অভাব পূরণের লক্ষ্যে ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো দ্রব্যের উপযোগ নিঃশেষ করাকে ভোগ বলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, একটি গাড়ি ব্যবহারের ফলে এক পর্যায়ে তা চালানোর অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ চালানো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাড়ির উপযোগিতা লাভ করাকে গাড়ির ভোগ বলা হয়।


আশাকরি “অর্থনীতি ১ম পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। অর্থনীতি ১ম পত্র সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন।

Leave a Comment