HSC অর্থনীতি ১ম পত্র ২য় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

অর্থনীতি ১ম পত্র ২য় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর: একজন ভোক্তা কিভাবে বাজার থেকে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করে, কোন কোন বিষয় দ্বারা ভোক্তার চাহিদা প্রভাবিত হয় এবং কোনো একটি বিষয় পরিবর্তন হলে ভোক্তা যেভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে তাকে ভোক্তার আচরণ বলে।

অন্যদিকে, উৎপাদনের উপকরণের দাম, প্রযুক্তি জ্ঞান, সময় ইত্যাদির পরিবর্তনের ফলে উৎপাদকের উৎপাদন সিদ্ধান্তে যে প্রভাব পড়ে তাকে উৎপাদকের আচরণ বলে। কোনো দ্রব্যের প্রতি আগ্রহ থেকেই চাহিদার সৃষ্টি হয়। চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখে উৎপাদক দ্রব্য উৎপাদন করে। উৎপাদক দ্রব্য যোগান দিলে নির্ধারিত দামে ভোক্তা তা ক্রয়ের মাধ্যমে ভোগ করে।

ভোক্তার মূল উদ্দেশ্য হলো ‘উপযোগ’ সর্বোচ্চ করা। সুতরাং ভোক্তা সর্বোচ্চ উপযোগ লাভ করতে গিয়ে সার্বিকভাবে যে কার্য সম্পাদন করে তাকে ভোক্তার আচরণ (Consumer’s Behaviour) বলে। মোটকথা উপযোগ সর্বোচ্চকরণই ভোক্তার আচরণ।


HSC অর্থনীতি ১ম পত্র ২য় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

১. পরিবর্তক দ্রব্যের দাম ও চাহিদার সম্পর্ক কীরূপ?

উত্তর: পরিবর্তক দ্রব্যের দাম ও চাহিদার সম্পর্ক বিপরীত। যদি দুটি দ্রব্যের মধ্যে একটির পরিবর্তে অন্যটি ভোগ করে প্রায় সমান উপযোগ পাওয়া যায়, তবে দ্রব্য দুটির একটিকে অন্যটির পরিবর্তক বা বিকল্প দ্রব্য বলা হয়। দুটি পরিবর্তক দ্রব্যের ক্ষেত্রে একটি দ্রব্যের দাম বাড়লে অন্যটির চাহিদা বাড়বে এবং একটি দ্রব্যের দাম কমলে অন্যটির চাহিদা কমবে। অর্থাৎ পরিবর্তক দ্রব্যের দাম ও চাহিদার সম্পর্ক বিপরীত।

২. চলক ও ধ্রুবক একই নয় কেন?

উত্তর: চলকের মান সর্বদা পরিবর্তনশীল কিন্তু ধ্রুবকের মান পরিবর্তনশীল নয় বলে চলক ও ধ্রুবক একই নয়। যেসব বিষয়ের মান পরিবর্তিত হতে পারে বা যাদের মান ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন হয়, তাই চলক। কোনো একটি দ্রব্যের দাম বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন হতে পারে। এজন্যই দামকে চলক বলে।

চলককে X, Y, Z, ইত্যাদি প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে ধ্রুবক একটি স্থির রাশি। যেসব বিষয় বা রাশির মান একটি গাণিতিক প্রক্রিয়ায় সবসময় স্থির বা নির্দিষ্ট থাকে, তাকে ধ্রুবক বলে। যেমন- প্রাকৃতিক সংখ্যা ১, ২, ৩…. ইত্যাদি। আর তাই চলক ও ধ্রুবক একই নয়।

৩. গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে কি চাহিদা বিধি প্রযোজ্য হয়?

উত্তর: না, গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি প্রযোজ্য নয়। স্যার রবার্ট গিফেন-এর মতে, কয়েক রকম দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে এবং দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ কমে। এ দ্রব্যগুলোকে গিফেন দ্রব্য বলে। গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি প্রযোজ্য হয় না।

৪. যোগান রেখা কি সর্বদা ডানদিকে ঊর্ধ্বগামী হয়?

উত্তর: না, যোগান রেখা সর্বদা ডানদিকে ঊর্ধ্বগামী হয় না। যে রেখার প্রতিটি বিন্দুতে বিভিন্ন দামে যোগানের বিভিন্ন পরিমাণ নির্দেশ করে তাকে যোগান রেখা বলে। যোগান রেখা বিভিন্ন কারণে ডানদিকে ঊর্ধ্বাগামী হয় না।

যথা- পরিবর্তক দ্রব্যের দামের পরিবর্তন, আবহাওয়ার প্রভাব, সময় মেয়াদ, বাজার পরিস্থিতি ইত্যাদির প্রভাব। আবার যোগান বিধির ব্যতিক্রমহেতু যোগান রেখা ডানদিকে ঊর্ধ্বমুখী নাও হতে পারে।

৫. ঋতু পরিবর্তন চাহিদাকে কীভাবে প্রভাবিত করে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি বা হ্রাস করে ঋতু পরিবর্তন চাহিদাকে প্রভাবিত করে। ঋতু পরিবর্তন চাহিদার পরিমাণকে প্রভাবিত করে। ঋতু পরিবর্তনের ফলে চাহিদার পরিমাণ কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। যেমন শীতকালে গরম কাপড়ের দাম বাড়লেও তার চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এসময় আইসক্রিমের দাম কমলেও তার চাহিদা বাড়ে না।

৬.. উপকরণ দামের সাথে যোগানের পরিমাণ কীভাবে সম্পর্কিত?

উত্তর: উৎপাদনের উপকরণের দামের সাথে যোগানের পরিমাণ বিপরীতভাবে সম্পর্কিত। উপকরণের দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিহেতু উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পায় ফলে যোগান হ্রাস পায়। বিপরীতক্রমে যোগান বৃদ্ধি পায়।

৭. আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার মান ঋণাত্মক হলে দ্রব্যদ্বয়ের সম্পর্ক কীরূপ হয়?

উত্তর: আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার মান ঋণাত্মক হলে দ্রব্যদ্বয়ের সম্পর্ক পরিপূরক হবে। দুটি সম্পর্কযুক্ত দ্রব্যের ক্ষেত্রে একটির দামের আপেক্ষিক বা. শতকরা পরিবর্তনের ফলে অন্যটির চাহিদার যে আপেক্ষিক বা শতকরা পরিবর্তন ঘটে এ দুই অনুপাতকে চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা বলে। চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার মান ঋণাত্মক হলে দ্রব্যদ্বয়ের সম্পর্ক পরিপূরক হয়।

৮. উপকরণ দাম কীভাবে যোগানের পরিমাণকে প্রভাবিত করে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উপকরণ দাম হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে যোগানের পরিমাণের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটিয়ে উপকরণ দাম যোগানকে প্রভাবিত করে। উৎপাদনের উপকরণের দাম পরিবর্তিত হলে যোগানের পরিমরাণ পরিবর্তিত হয়। উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় ফলে পূর্বের তুলনায় উৎপাদন কমে এবং যোগানের পরিমাণও কমে যায়।

আবার উন্নকরণের দাম হ্রাস পেলে উৎপাদন ব্যয় কমে যায় ফলে পূর্বের তুলনায় উৎপাদন ও যোগানের পরিমাণ বাড়ে। এভাবে উপকরণ দাম যোগানের পরিমাণকে প্রভাবিত করে।

৯. বিলাসজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না কেন?

উত্তর: বিলাসজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা অপরিবর্তিত থাকে বলে এসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না। অনেক ধনী লোক মূল্যবান দ্রব্য ক্রয়ে বা ভোগে আভিজাত্য অনুভব করে। বিলাস দ্রব্য যেমন- মূল্যবান গাড়ি, দামি পোশাক, অলংকার, হীরক-ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি পেলে তাদের চাহিদা কমে না বরং বৃদ্ধি পায়। তাই বিলাস দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না।

১০. ভোক্তার আয় কীভাবে চাহিদাকে প্রভাবিত করে?

উত্তর: ভোক্তার আয় হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদাকে প্রভাবিত করে। ভোক্তার আর্থিক আয় বৃদ্ধি পেলে তার দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বিভিন্ন দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আবার ভোক্তার আয় হ্রাস পেলে তার দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে চাহিদা হ্রাস পায়।

১১. চাহিদা রেখা কেন ঊর্ধ্বগামী হতে পারে?

উত্তর: চাহিদা বিধি অকার্যকর হলে চাহিদা রেখা ঊর্ধ্বগামী হতে পারে। অন্যান্য অবস্থা স্থির থেকে বিভিন্ন দামে কোনো ক্রেতা একটি দ্রব্যের যে বিভিন্ন পরিমাণ ক্রয় করে তা যে রেখার মাধ্যমে দেখানো হয় তাকে চাহিদা রেখা বলে। চাহিদা রেখা সাধারণত বামদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয়ে থাকে। তবে গিফেন দ্রব্য, বিলাসজাত দ্রব্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদার পরিমাণ কমে না বরং বাড়ে। এক্ষেত্রে চাহিদা রেখা ঊর্ধ্বগামী হয়।

১২. প্রান্তিক উপযোগ কখন বাড়তে থাকে?

উত্তর: একক সময়, ভোক্তার রুচি, অভ্যাস ও আসল পরিবর্তন, শখের দ্রব্য, পরিবর্তক দ্রব্য ও পরিপূরক দ্রব্যের প্রভাব ইত্যাদি কারণে প্রান্তিক উপযোগ বাড়তে থাকে।

ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি অনুযায়ী কোনো দ্রব্য ক্রমাগত ভোগ করতে থাকলে ভোক্তার নিকট ঐ দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ ক্রমাগত কমতে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ বিধির ব্যতিক্রম ঘটে তখন প্রান্তিক উপযোগ বাড়তে থাকে।

১৩. দামের সাথে বিলাসজাত এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সম্পর্ক কীরূপ হয়?

উত্তর: দামের সাথে বিলাসজাত এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সম্পর্ক সমমুখী হয়। অনেক ধনী লোক মূল্যবান দ্রব্য ক্রয় বা ভোগে আভিজাত্য অনুভব কর। বিলাস দ্রব্য যেমন- মূল্যবান গাড়ি, দামি পোশাক, অলংকার, হীরক ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি পেলে তাদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে দামের পরিবর্তনে চাহিদার সাড়া দেওয়ার মতো মাত্রা খুবই কম।

১৪. ক্রেতার আয় বৃদ্ধি পেলে মোবাইলের চাহিদার কীরূপ পরিবর্তন হয়?

উত্তর: ক্রেতার আয় বৃদ্ধি পেলে মোবাইলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কোনো পণ্যের দাম, ক্রেতার রুচি এবং অন্যান্য সম্পর্কিত, পণ্যের দাম স্থির থাকলে আয়ের পরিবর্তন হলে চাহিদার পরিবর্তন হয়। আয় বাড়লে চাহিদা বাড়ে এবং আয় কমলে চাহিদা কমে। তাই বলা যায়, আয়ের সাথে চাহিদার ধনাত্মক সম্পর্ক রয়েছে।

১৫. বক্র রেখার ঢাল কি স্থির? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: না, বক্র রেখার ঢাল স্থির নয়। “কোনো বজ্র রেখার নির্দিষ্ট বিন্দুতে ঢাল পরিমাপ করতে ঐ বিন্দুতে একটি স্পর্শক অঙ্কন করতে হবে। স্পর্শ বক্ররেখার ঢাল হবে বক্ররেখার নির্দিষ্ট বিন্দুর চালের সমান। যেহেতু বক্ররেখার বিভিন্ন বিন্দুতে বিভিন্ন স্পর্শক রেখা অঙ্কন করতে হয় তাই তার চালও ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই বলা যায়, বক্র রেখার ঢাল স্থির নয়।

১৬. মোট উপযোগ বৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক উপযোগ সর্বদা বৃদ্ধি পায় না-ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একজন ভোক্তা কোনো দ্রব্যের যতগুলো একক ভোগ করেছে সেগুলো হতে প্রাপ্ত উপযোগের সমষ্টিকে মোট উপযোগ বলে।

আবার কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দ্রব্যের অতিরিক্ত এক একক ভোগের ফলে মোট উপযোগ যে পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলে। মোট উপযোগ বৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক উপযোগ সর্বদা বৃদ্ধি পায় না। মোট উপযোগ যখন ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ে প্রান্তিক উপযোগ তখন কমতে থাকে। আবার মোট উপযোগ যখন সর্বাধিক হয়, প্রান্তিক উপযোগ তখন শূন্য হয়। তাই বলা যায়, মোট উপযোগ বৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক উপযোগ সর্বদা বৃদ্ধি পায় না।

১৭. ‘দামের সাথে যোগানের পরিমাণের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ বা সমমুখী’- ধারণাটি বুঝিয়ে লেখ।

উত্তর: দামের হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে যোগানের পরিমাণের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে বলে দামের সাথে যোগানের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ বা সমমুখী। অর্থনীতিতে যোগান বলতে একজন বিক্রেতা কোনো একটি দ্রব্যের যে পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সময়ে এবং একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে আসে তাকে বোঝায়।

দ্রব্যের যোগান উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল হলেও দ্রব্যের দাম ও সময়ের ওপর যোগান অনেকটা নির্ভরশীল। কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লে যোগানের পরিমাণ বাড়ে ও দাম কমলে যোগান কমে। সুতরাং চাহিদার মতো যোগানও দামের একটা ক্রিয়া বা অপেক্ষক। তাই দামের সাথে যোগানের পরিমাণের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ বা সমমুখী।

১৮. চাহিদা বিধি কি সর্বদা কার্যকর? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: না, চাহিদাবিধি সর্বদা কার্যকর নয়। কোনো দ্রব্যের দামের সাথে তার চাহিদার পরিমাণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোনো দ্রব্যের দাম কমলে তার চাহিদার পরিমাণ বাড়ে এবং দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে। দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে ক্রিয়াশীল বিপরীত সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলে।

অর্থনীতিবিদ ও মার্শাল বলেন, “অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে এবং দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে।” সুতরাং যে রেখাতে দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা হ্রাস পায় এবং দাম হ্রাস পেলে চাহিদা বৃদ্ধি পায় সে রেখা দ্বারা চাহিদা বিধি কার্যকর হওয়াকেই নির্দেশ করে। কিন্তু আয়ের পরিবর্তন, প্রত্যাশার পরিবর্তন হলে চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না।

২০ . ভোগের ক্ষেত্রে প্রান্তিক রেখা নিম্নগামী হয় কেন?

উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে অতিরিক্ত একক ভোগের মাধ্যমে যে অতিরিক্ত উপযোগ পাওয়া যায়, তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলে। ভোগ বৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক উপযোগ হ্রাস পায়। এ অবস্থায় মোট উপযোগ যখন সর্বোচ্চ হয় প্রান্তিক উপযোগ তখন হ্রাস পেয়ে শূন্য হয়। তাই ভোগের ক্ষেত্রে প্রান্তিক উপযোগ রেখা নিম্নগামী হয়। প্রান্তিক উপযোগ শূন্য হওয়ার পর ঋণাত্মক হতে পারে।

২১. চাহিদা রেখা কখন ঊর্ধ্বগামী হয়?

উত্তর: চাহিদা বিধি অকার্যকর হলে চাহিদা রেখা ঊর্ধ্বগামী হয়। স্যার রবার্ট গিফেন ১৮৪০ সালে নিকৃষ্ট পর্যায়ভুক্ত কিছু পণ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে লক্ষ করেন যে, ঐ সকল দ্রব্যের দামের বৃদ্ধিতে চাহিদাও বৃদ্ধি পায় এবং দামের হ্রাস পেলে চাহিদাও হ্রাস পায়।

সে সময়ে আইরিশ কৃষকদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে তিনি মত প্রকাশ করেন যে, অত্যন্ত নিম্ন আয়সম্পন্ন পরিবারের মূল খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম ও চাহিদার মধ্যে সমমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। তার নামানুসারে ঐ শ্রেণির নিম্নমানের দ্রব্যকে ‘গিফেন দ্রব্য’ বলা হয়। এ ধরনের চাহিদা রেখা মূল বিন্দু থেকে ঊর্ধ্বগামী। তাই বলা হয় গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা রেখা ঊর্ধ্বগামী হয়।

২৩. জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে গাড়ির চাহিদা কমে কেন?

উত্তর: দ্রব্যের দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে গাড়ির চাহিদা বলে। জ্বালানি তেলের সাথে গাড়ির চাহিদার পরিপূরক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে।

এরূপ ক্ষেত্রে একটি দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে অপর দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পায় এবং একটি দ্রব্যের দাম কমলে অপর দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। যেমন- তেলের দাম প্রতি লিটার যখন ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা হয় তখন চাহিদা ৮০ একক থেকে কমে ৫০ এককে চলে আসে।

২৪. ভেবলেন দ্রব্য কী? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: জাঁকজমকপূর্ণ দ্রব্যকে ভেবলেন দ্রব্য বলা হয়। যেমন- দামি গাড়ি, দামি অলংকার ইত্যাদি। জাঁকজমক পণ্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না। মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে এমন দ্রব্য পেতে সকলেই আগ্রহী। এজন্য এ ধরনের দ্রব্যের দাম বাড়লেও চাহিদা কমে না।

সমাজের এক শ্রেণির ধনী লোক বহু মূল্যবান দ্রব্য ব্যবহার করে জাঁকজমক প্রদর্শন করে এবং মনে করে যে, এর দ্বারা সমাজে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। উনবিংশ শতকের মার্কিন অর্থনীতিবিদ থর্সটেইন ভেবলেন এরূপ ভোগকে জাঁকজমক ভোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

২৮. পরিপূরক দ্রব্য বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: দুটি দ্রব্যের মধ্যে একটির ভোগ বৃদ্ধির জন্য যদি অন্যটির ভোগ বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, তবে দ্রব্য দুটিকে একে অপরের পরিপূরক বলা যায়। পরিপূরক দ্রব্য সাধারণত যুগ্মভাবে ব্যবহৃত হয় এবং একটির প্রয়োজন হলে অন্যটিরও প্রয়োজন হয়। যেমন- গাড়ি পাওয়ার সাথে সাথে পেট্রোলের উপযোগও বেড়ে যায়। অনুরূপভাবে কফির দাম বাড়লে চায়ের উপযোগ বৃদ্ধি পায়।

২৯. চাহিদা বিধি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কোনো দ্রব্যের বাজার দামের সাথে তার চাহিদার পরিমাণের সম্পর্ক যে বিধির সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয় তাকে চাহিদা বিধি বলে। অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত থাকলে কোনো স্বাভাবিক দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে তার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং দাম বৃদ্ধি পেলে তার চাহিদা হ্রাস পায়। দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে এ রকম সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলা হয়।

৩০. চাহিদা সূচি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একজন ক্রেতা বিভিন্ন দামে একটি দ্রব্যের যে পরিমাণ ক্রয় করতে ইচ্ছুক বা প্রস্তুত থাকে তার সংখ্যাত্মক প্রকাশ বা তালিকাকে চাহিদা সূচি বলে। চাহিদা বিধির গাণিতিক প্রকাশ হলো চাহিদা সূচি। চাহিদা সূচিতে দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে আবার দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে। তাই এ সূচিতে দামের সাথে চাহিদার বিপরীত সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। আবার চাহিদা সূচি চাহিদা রেখা অঙ্কনের ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে।

৩১. ধ্রুবক বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: গণিতশাস্ত্রে যেসব রাশির মান সকল অবস্থাতেই অপরিবর্তিত থাকে তাকে ধ্রুবক বলে। ধ্রুবক একটি স্থির রাশি। এই রাশির মান একটি গাণিতিক প্রক্রিয়ায় সবসময় স্থির বা নির্দিষ্ট থাকে, কখনো পরিবর্তন হয় না। যেমন- প্রাকৃতিক সংখ্যা ১, ২, ৩… ইত্যাদি। এছাড়া ইংরেজি বর্ণমালার a, b, c ও গ্রিক বর্ণমালার কয়েকটি অক্ষর যেমন- a, B. y ইত্যাদি ধ্রুবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে গাণিতিক প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চলকের সাথে গুণ আকারে ব্যবহৃত হয়।

৩২. যোগান বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: যোগান বলতে বাজারে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যে পরিমাণ দ্রব্য বর্তমান থাকে; তাকে বোঝায়। অর্থনীতিতে যোগান শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে যোগান বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি, নির্দিষ্ট দামে বিক্রেতা যে পরিমাণ দ্রব্য বিক্রয় করতে প্রস্তুত থাকে তাকেই বোঝায়। অধ্যাপক মেয়ার্স বলেন, “কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন সম্ভাব্য দামে কোনো দ্রব্যের দামের যে পরিমাণ বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন করে তার তালিকাকে যোগান বলে।”


আশাকরি “অর্থনীতি ১ম পত্র ২য় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। অর্থনীতি ১ম পত্র সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন।

Leave a Comment